ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

গল্প

নির্মল চর

কস্তুরী

শ্যাওলা জমা গতিহীন কালো নদির জলের দিকে চেয়ে আমিনার মনে পড়ে সে দিনের কথা। হঠাৎ গভীর রাতে বিধ্বংসী, রাক্ষসী পদ্মার ভয়াবহ রূপ। প্রতিবেশীদের বুক ফাটা কান্না, কোলাহল, ছুটোছুটি আর আর্তনাদে আমিনা আর তার মায়ের ঘুম ভেঙে যায়।এক প্রতিবেশিনী ময়নার কুঁড়ে ঘরটা তখন জলের গভীরে।টিনের দরজা দড়াম দড়াম করে বাড়াচ্ছে ময়না।সর্বনাশ! ঘর থেকে তোমরা বেরিয়ে এসো, না হলে ঘর সমেত তোমরাও জলের তলায় তলিয়ে যাবে। ময়নার ডাকে আমিনা আর তার মা দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আমিনা দেখে তাদের ঘরের বেশ কিছুটা দূরে ক্ষুব্ধ জলরাশি। প্রতি বর্ষায় এমনই রাক্ষসী রূপ ধারণ করে এই মোহময়ী পদ্মা। এমনই চণ্ডালিনি হয়ে ওঠে, যা পায় সবই গ্রাস করে ফেলে। ময়না আমিনার মাকে বলে বুবু দাঁড়িয়ে কী দেখছো, ঘরের জিনিসপত্র বের করে ফেলো। আমিনার কোনো আগ্রহ না দেখে তার মা নিজেই ঘর থেকে সামান্য জিনিসপত্র বের করে আনে। মায়ের জীবনযুদ্ধ দেখে আমিনাও ক্লান্ত,অবসন্ন।মায়ের প্রতিও তার গভীর অভিমান। মাত্র পনেরো বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয় বরকত মিঞার ছেলে রহিমের সাথে। রানিতলা থানার পদ্মার তীরবর্তী অঞ্চলে। সেই সময় আমিনা ক্লাস এইটে পড়ে। যখন তার জীবন গড়ার সময় তখনই দুঃসহ অন্ধকারে তাকে ঠেলে দেওয়া হয়। রহিম মুম্বাইয়ে জরির কাজ করে। বরকত মিঞা জানে তার ছেলে খুব বাধ্য।ছেলেকে ডেকে পাঠায় বিয়ের জন্য।পিতার কথা রাখতেই রহিম এসেছিল আমিনাকে বিয়ে করতে।কিন্তু বিয়ের রাতে সদ্য বিবাহিত আমিনাকে শুনতে হয়েছিল কঠিন কথা। রহিম আমিনাকে বলে, পরশু আমার reservation আছে,ওই ট্রেনে আমাকে ফিরতে হবে মুম্বাই,ওখানে আমার বিয়ে করা বউ আছে।শুধুমাত্র পিতার কথা রাখতেই তোমাকে বিয়ে করেছি।আমিনা নিস্তব্ধ,নির্বাক।শুধু সকরুণ দৃষ্টিতে স্বামীর পানে চেয়ে ...কত কথা বলার ছিলো, কেন করলেন এমন আমার সাথে? না কিছুই বলা হয়নি আমিনার।সেই রাতেই চলে গিয়েছিল রহিম, সেই প্রথম,সেই শেষ। সেই থেকেই আমিনার একাই পথ চলা।অবলম্বন বলতে গেলে বৃদ্ধা মা। পদ্মার পাড়ের মানুষদের জীবনে লেগে থাকে প্রতিনিয়ত ভাঙা গড়ার খেলা। তার জীবনেরও ভাঙা গড়া।পদ্মা একদিকে যেমন গ্রাস করছে ঘর বাড়ি, মাঠ, স্কুল,গ্রামকে গ্রাম।নিরাশ্রয় মানুষেরা দিকবিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।আবার কেউ বিস্তীর্ণ পদ্মার ওপারে চরে ঘর বাড়ি করে জীবন যাপন করছে।চরে আমিনা মাকে সঙ্গে নিয়ে একটা খড়ের ঘর বেঁধেছে। সে এখন অর্ক কোচিং সেন্টার এ পড়ে।প্রতিদিন নৌকায় এপারে এসে কলেজ করে,বিভিন্ন কাজ সেরে সন্ধ্যায় নৌকায় আবার ফিরে যায়।সফির সঙ্গে পরিচয় হয় অর্ক কোচিং সেন্টারে। সফি কোচিং সেন্টারের হেডমাস্টার এর বন্ধু,তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদীপ্ত।

হেডমাস্টার: তুমি তো জানো আমাদের এখানকার অবস্থা কতটা শোচনীয়, মানুষের অবস্থা দিন আনতে পান্তা ফুরোয়। এই যে পদ্মার ভাঙ্গন এ নিয়ে কেউ ভাবে না।

সফি: জানি রবি, এতো দেশের অন্যতম জাতীয় সমস্যার মধ্যে পড়ে, এই সমস্যা জাতীয় স্তরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তো তোমাদেরই। কিন্তু তা না করে এই অবস্থার জন্য দায়ী কিন্তু তোমরাই।

রবি: কেন আমরা কেন?

সফি: তোমরাই তো, ভোটের সময় যখন কিছু বালির বস্তা দিয়ে পাড় বাঁধিয়ে দেয়, তখন তোমরা ভাবো সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো, তোমরা মেনে নাও, ভোট দাও সেই প্রতারক নেতানেত্রীদের।এই গভীর সমস্যার সমাধান তো অন্যভাবে করতে হবে,রবি।

রবি: কীভাবে?

সফি: তোমাদের সকলকে বোঝাতে হবে মৌলিক সমস্যাটা। এই যে রক্ষরা বলে এতো প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা, কিন্তু প্রকৃতি কি সত্যি আহাম্মক? না কখনই না, তোমাদের এখান থেকে গভীরভাবে প্রতিবাদ যদি না হয় তবে কীভাবে ঘটবে সমাধান? সকলকে ঐক্যবদ্ধ করো রবি, এই যন্ত্রণা আর কতদিন সইবে?

রবি: হ্যাঁ ভাই ঠিকই বলেছ, তোমার কথাই বেশ শক্তি আছে, অনুপ্রেরণা আছে। বকুল গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আমিনা সফির মুখের পানে চেয়ে থাকে। সফির চোখে আগুন আছে,সে আগুনকেই যে আমিনা পেতে চাই। আমিনা শত প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে গ্রাজুয়েট হয়েছে। সে আজ যুবতী, আগুনের স্পর্শ তার চায়। সে এখন পদ্মার তীরবর্তী একটি দোকান ভাড়া নিয়ে চরের মেয়েদের নিয়ে উলের কাজ শেখানোর জন্য একটা নিটিং সেন্টার খুলেছে। সফি মেশিন ও উলের যোগান দেয়। সফি ভাই শোনেন এদিকে। বলো আমিনা কেন আমায় ডাকলে।দেখুন ঐদিকে , সফি ও আমিনা দেখে দুজন মানুষ নর ও নারী পদ্মার উঁচু পাড়ে দাঁড়িয়ে। পুরুষটি নীচে নেমে হাত বাড়িয়ে দেয়। পুরুষটির হাতটিকে শক্ত করে ধরে নারীটি নীচে নেমে যায়। দুজনে হাত ধরে নৌকা পর হয়ে, ঘনিষ্ঠ বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে বিস্তীর্ণ বালুকারাশি পার হয়ে সর্ষে ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলে। দেখতে দেখতে তারা দৃষ্টির বাইরে চলে যায়। সফি চঞ্চল হয়ে ওঠে,মনে দোলা লাগে। আমিনার ডান হাতটি মুঠোর মধ্যে  নিয়ে আলতো করে চাপ দেয়।

 

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::