ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

গল্প

হীনমন্য

কস্তুরী

বাজার থেকে সবজি,মুদি বাজার, গেটে রাখা জল দিয়ে ভাল ভাবে ধুয়ে মনোরমা ডাকলো– কৈ গো ঝুড়িটা একটু দিতে পারবে?

সতীশ– না, খাতা দেখছি তুমি নিয়ে যাও।
মনোরমা– সে তো জানি আমাকেই তো নিতে হবে। এসব তো আমারই কাজ। সকাল থেকে ঘরদোর পরিষ্কার করে, বাসন ধুয়ে, জামা কাপড় কেঁচে বাজারে গিয়েছিলাম। বাইরের মালপত্র তো আবার ভেতরে নিয়ে ঢোকা যাবে না। বাতিকগ্রস্ত কি না!
সতীশ– সকাল সকাল চেঁচামেচি করে মাথা গরম করো না। তুমি কেন বাজারে যাও আমি বুঝি কিছু বুঝি না!
কদর্য উক্তি শুনে মনোরমার ভেতরে আগুন জ্বলে উঠে। বৈশাখের সকালের গুমোট আরও বেড়ে যায়। কেন যাই তা তুমি যদি বুঝতে! তোমার পায়ের ব্যাথাটা এখন কেমন আছে? আজকে একবার ফিজিওথেরাপি করতে যাবে আমার সঙ্গে?

সতীশ– আমায় দয়া দেখানো হচ্ছে। মনোরমা মনে মনে ভাবে কে যে কাকে দয়া করেছে। পাঁচ বোন অভাবের সংসার বাবাই সংসারে একমাত্র রোজগেরে। দু-তিন বিঘে জমি চাষ করে কত টুকুই বা আয় হত। নিতাই কাকা দয়ালু মানুষ আমাদের সম্বন্ধটা করেছিলেন। স্কুল মাস্টার শিক্ষিত ছেলে আমাদের মত মেয়েদের কি এমন ছেলে জোটে! সতীশ দশ বছর বয়সে খেজুর গাছে রস পাড়তে উঠে পড়ে গিয়ে বাম পাটা ভেঙ্গে যায়। চিকিৎসার ভুলের জন্য হাঁটুর নিচ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত শুকিয়ে সরু হয়ে যায়। কিন্তু তাতে কি, সতীশ ভাল মাইনে পায়, তার সম্মান আছে।

সতীশ– বেশ,বাইরের হাওয়া খেয়ে এলে এবার সংসারের কাজে মনোযোগ দাও। আমার গরম জল চাই, স্নান করব। সতীশ সরু পাটায় তেল মালিশ করে। মনোরমা গ্যাসে জল বসিয়ে সতীশের সরু পাটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।

সতীশ– কী দেখছ এমন করে? আমায় ঘেন্না হচ্ছে। মনোরমা কোনো উত্তর দিতে পারে না। ঠোঁট দুটি অব্যক্ত যন্ত্রণায় কাঁপতে থাকে। সংকীর্ণ কারাগারে নিজের বিষাক্ত চিন্তায় আবদ্ধ থেকে, হীনমন্যতায় ভুগে সতীশ একেবারে অমানুষ হয়ে উঠেছে। তাঁর কষ্ট যে আমায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে পীড়া দেয় তাকি কোনো দিন সে অনুভব করতে পারবে?

দিন কয়েক থেকে সতীশের কোমর থেকে হাটু পর্যন্ত খুব ব্যাথা, যন্ত্রণায় ছটফট করছে। এদিকে মনোরমা নাওয়া-খাওয়া ভুলে সতীশকে সুস্থ করে তোলার ধনুক ভাঙ্গা পণ করেছে। বিভূতি ডাক্তারকে বাড়িতে ডেকে দু-বেলা ফিজিওথেরাপি, তেল মালিশ, হট ব্যাগে সেঁক দেওয়া, সতীশের শয্যার পাশে বসে সারা রাত যত্ন নেওয়া। সতীশ ঘুমিয়ে পড়লে শিয়রে বসে ঝিমোয়। গভীর রাত্রে বৈশাখের আকাশে ঘনঘন মেঘ ডাকার আওয়াজে সতীশের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরের কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না। মাথার পাশের টেবিল ল্যাম্পটি জ্বেলে দেখে মনোরমা চেয়ারে বসে ঘুমোচ্ছে। এ কদিনে তার চেহারার এ কি হাল হয়েছে? চোখের নিচে কালি পড়েছে,মুখটা শুকিয়ে গিয়েছে, চুলে জট পড়েছে, কত দিন চুলে চিরুনি পড়েনি। টেবিল ল্যাম্পের মৃদ আলো মনোরমার মুখে পড়ছে আর তার ভেতরের দীপ্তি যেন ঠিকরে ছড়িয়ে পড়ছে। কী অপরূপ তার সেবা, নিষ্ঠা, ভালবাসা। ধীরে ধীরে ডান পায়ের উপর ভর দিয়ে উঠে বসে বিছানায় সতীশ। ডাকে, রমা রমা, ধড়মড়িয়ে ওঠে মনোরমা কত দিন এই নরম ডাক শোনেনি মনে করতে পারে না।

সতীশ– রমা বিছানায় বসো। মনোরমা উঠে গিয়ে জানালায় দাঁড়ায়। বাইরে অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জল পড়ে। ভেতরে মনোরমার কত দিনের অব্যক্ত মেঘ অবিরাম বৃষ্টির ধারার মত ঝরে পড়ে।

 

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::