ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

প্রবন্ধ

ব্যক্তি ও আর্থসমাজের আন্তঃ বিশেষণ

শ্রীচেতনিক

তা হল আমিত্ব। ব্যক্তিসত্তার না বাচকতা ও হ্যাঁ বাচকতার দ্বন্দ্বে যাকে বার করে আনতে হয়। যা নৈর্ব্যক্তিকতামুখীন চেতনাগত বাস্তবতা। এই চেতনা যখন সমাজ ও ব্যক্তির জীবনের নির্ধারক ভূমিকা নেয় তখনই আর্থসমাজে স্বর্গ রচিত হয়।

যেমন ঊনবিংশের সোভিয়েত। যেখানে লেনিনীয় আমিত্ব সাধনায় রাশিয়ান মুক্তি অর্জিত হল। যেমন চীন, ভিয়েতনাম বা পৃথিবীর আরো অনেক জনপদ। আর এসবের বহুপূর্বে ইসলামের মক্কাবিজয় সেই আমিত্ব সাধনায় অর্জিত চেতনা বস্তুত্বেরই আর্থসামাজিক কীর্তি।

এত উপরের কথা হল। ভেতরের কথাটি কী। দেখা যাক। শ্রমবাচক সুতোতেই ব্যক্তি আর্থসামাজিক। তাতেই তার দেহমনগত এগজিস্টান্স। শ্রমবাচকতায় উৎপন্ন দ্রব্যের দখল প্রসঙ্গেই তার সত্তার তলদেশ পরিষ্কার নজরে আসে। যখন তার উৎপাদক রূপ স্রষ্টাচরিত্র হারিয়ে কুক্ষিবাচক রূপ গণেশ চরিত্রে সে সংক্রামিত হতে থাকে। পরিণামে কুবেরের আওতায় উৎপাদিত সম্পদ ধনরূপে কুক্ষীগত হয়ে আর্থসমাজের কোনোই কাজে আসেনা। শক্তি সীমাবদ্ধতায় এই দখল প্রবণতা ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় অধিকাংশ সত্তায় দখলকাম হলেও দখলবর্জিত রয়ে যায়। বিলাস-দারিদ্র্য সংক্রমণ। যেখান থেকে সন্ত্রাস। তার থেকে আসে সংক্রমণী যৌনবৃত্তি, উঞ্ছবৃত্তি, ভিক্ষাবৃত্তি ইত্যাদি। ব্যক্তি ঐ শ্রমবাচক সুতোর গ্রন্থিতে গাঁথা থাকলেও, তাতে শ্রম দিলেও মূল্যহীন জীবন যন্ত্রণায় ককাতে থাকে। এই ককানি থেকে মুক্তিবাচক অভীপ্সায় সে কোনখানে যাবে? ভেতরে না বাইরে? বাহির তো সেই ককানি বাস্তবতা। অতএব ঘর থেকেই তাকে এগোতে হয়। ঘরে কী দেখবে সে? কীভাবেই বা দেখবে? অর্গলবদ্ধ যে ঘরে তার প্রাণভোমরা বন্দি সেখান থেকে তাকে বের করে আনতে সে তখন অগ্রসর হয়। ডুব দেয় নিজ সত্তায়। অবলোকন করে চোর এবং চোরামি। চোর ধরে। বন্দি করে। জ্ঞাতা স্থিত হয়। কী নিয়ে সে বাইরে আসে? বাইরে আসে তারই চেতনা নিয়ে। যে ছিল বন্দি সত্তা-কারাগারে। প্রবৃত্তির অন্ধকারে। সেই চেতনা তখন আর্থসমাজকে বিবর্তিত করে প্রগতির ধ্বজা উড়ায়। জ্ঞান-বিশ্বাস অর্জনে সংগ্রামী এষণায় সমাজ তখন নতুন সাজে সজ্জিত হয়। এটাই ইতিহাস।

এই ইতিহাস নিমার্ণী বাস্তবতায় জ্ঞান তথা তত্ত্ব প্রায়োগিক কৃৎকলায় রাজনীতিতে রূপ নিলেই ব্যক্তি ও আর্থসমাজের বস্তুলব্ধি ঘটে। যার উদাহরণগুলি প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে।

আমি, আমিত্ব, বস্তু

আমি একটি শক্তি। দেহের পদার্থ অপর শক্তি। দুই শক্তি বিশিষ্ট মানব সত্তা। এই আমি শক্তি দেহের শক্তির কবল্গ্রস্ত হয়েই মানব শিশুর ভ্রূণ। দেহগঠনের ক্রমপর্যায়ে শিশুর প্রাকৃতিক স্তর পরবর্তী সত্তার জাগরণ ঘটে। এই জাগরণেরই ক্রমে ফুলের সৌরভ আর বৃশ্চিকের দংশন দুই-ই মালুম হয়। মালুম এর গোড়ার কথা এই আমিত্ব। যা আমির-ই বিশেষণ। আমি দ্বি-ধা। আমিত্বহীন আমি, আর আমিত্বময় আমি। আমিত্বহীন আমিতেই ঘটে রক্ষণকামী পূর্বোল্লোখিত চৌর্য্য। আর চোর ধরার প্রযুক্তি অর্জিত হয় আমিত্বময় আমিতে। আমিত্বহীন আমি বস্তু অর্থাৎ সত্য থেকে দূর ব্যবধিত। আমিত্বময় আমি বস্তু সমন্বিত। বস্তু সন্নিকট।

বস্তু কী? অস্তিত্বের জবাব- বস্তু তাই যা চর্চা করলে উন্নত হয়, না করলে সুপ্ত হয়ে যায়। তখন রক্ষণকামী আবর্তে আমির কী হাল হয়? তা আজকের বিশ্বের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়।

আমিত্বহীন আমির প্রথম ধাপে আমিত্ব বিস্মরণ ও পরবর্তীতে আমিত্ব প্রতারণা মজ্জাগত হয়ে যায়। যার প্রায়শ্চিত্ত করা যায় না। এই প্রায়শ্চিত্ত অযোগ্য আমি বস্তু অর্থাৎ সত্যকে বুড়ো আঙুল দেখায় সেই সত্যেরই নাম করে।

বস্তুতত্ত্বের ভেদক

এই বস্তুতত্ত্ব কে ভেদ করে? ভেদ করেন ব্যাস। কেমন করে করেন? না, জ্ঞান-বিশ্বাস-সংগ্রাম প্রযুক্তিতেই করেন। তার প্রথমেই থাকে ঐতিহ্যের ধারণা মু্ক্তি। পরবর্তীতে জড়ের আকর্ষণ মুক্তি। চেতনায় রা-ধা প্রযুক্তি ব্যতিরেকে যা সম্ভব নয়। যার তত্ত্বকাহিনি পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত তথা ভারতীয় দর্শন।

চেতনার এই রা-ধা প্রযুক্তি আর্থসমাজে প্রযুক্ত না হলে আমি মুক্তি পায় না। অচেতন সত্তার ঘুম ভাঙানীতে চেতন, তাতে দৃষ্টি নিক্ষেপে নিবিষ্টতা, আমিত্ব অবলোকনে স্বীয় আমিত্ব প্রীতি, সেই আমিত্ব যন্ত্রণার কারণ যে নাস্তি তাকে দ্বন্দ্বে আহ্বান, নাস্তির দহনেই অর্জিত সেই চেতনার মুক্তি। আর মুক্ত চেতনার স্তর অতিক্রমে অনাপেক্ষিকতায় অধিষ্ঠানই ধা। চেতনার এই প্রযুক্তি চেতনায় অধিষ্ঠানেই যার পূর্ণত্ব। অধিষ্ঠিত চেতনার আর্থসামাজিক প্রতিষ্ঠা না ঘটলে আর্থসামাজিক রক্ষণকামিতা তাঁকেও জ্বালাতে ছাড়ে না। যেমন ছাড়েনি আহম্মদকে। ছাড়েনি চেতনা-নিকট লেনিনকে। তাই আমির এই পুরাণে অর্জিত আমিত্বকে আর্থসমাজে বর্তন করাতে হয়। যা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ।

এই পুরাণকার তখন কী করেন?

ব্যক্তি ও তার আর্থসমাজের বিশেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বৃন্দাবনী রণকৌশলে সরস্বতী হয়ে আর্থসমাজকে জাগিয়ে তোলেন। প্রভঞ্জনী ক্ষিপ্রতায় সংস্কৃতির ভিত ব্যবহারে রাজনৈতিক কৃৎপ্রজ্ঞার পরিচয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এ দ্বিতীয় ইতিহাস।

প্রথম ইতিহাস চেতনার রা-ধা অর্জন। আর তাতেই দৃষ্ট মহা-আমির মহা আমিত্বিক মহা নিয়ম। সেই দর্শনে দৃষ্ট চেতনার অধিষ্ঠিতি মানে চেতনিক বিপ্লব। এই বিপ্লবেই লাভ হয় জ্ঞান-দর্শন-সাহিত্য। যা আর্থসমাজে শ্রমমূল্য বিন্যাসনী বা্স্তবতায় প্রযুক্ত হলে ঘটানো যায় আর্থসামাজিক বিপ্লব। যা আর্থসামাজিক ইতিহাস সৃষ্টি।

উল্লেখ্য যে, মার্কসীয় তত্ত্ব অর্জন সেই প্রথম ইতিহাসেরই আপেক্ষিক দৃষ্টান্ত। আর সেই তত্ত্বেরই আর্থসামাজিক প্রযৌক্তিকতায় ইতিহাস সৃষ্টির দৃষ্টান্ত সোভিয়েত প্রতিষ্ঠা। যেখানে মার্কসীয় বৃন্দাবনী ট্যালেন্ট লেনিনীয় প্রযুক্তিতে আর্থসমাজকে মুক্ত করে।

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::