ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

সম্পাদকীয়

সাংস্কৃতিক/ রাজনৈতিক সংগঠন প্রসঙ্গে

(১) সংগঠন কী

সম্যক রূপে গঠিত যা। কী? ব্যক্তি সমূহের যূথ। তা সংগঠন হতে গেলে তাকে সম্যক রূপে গঠিত হতে হবে। তবেই তা অভিষ্ঠ ফল দেবে। অন্যথায় নয়। ব্যক্তি সমূহ বা ব্যষ্টিকে সংগঠিত সমষ্টিতে রূপ দেবার প্রয়োজন কী?

(২) সংগঠন কেন?

ব্যক্তি একক ভাবেই জীবনের ভোগ বা দুর্ভোগ পোহায়। কিন্তু তার এই ভোগ/দুর্ভোগের যে জীবনটি সে যাপন করে তার ভিত্তি হল শ্রম-উৎপাদন-মূল্য। যা সে একক ভাবে সম্পন্ন করতে পারে না। সেখানে তাকে শ্রমের বিনিময় করতে হয়। না হলে তার জীবন চলে না।

যেমন, সে শিক্ষক। স্কুলে বিদ্যার্থীদের পড়ানো তার কাজ। সে শ্রম দিল। বিনিময়ে কিছু অর্থ পেল। অর্থে তো পেট ভরবে না। তার চায় পেট ভরানোর জিনিস। চাল, ডাল, তেল, নুন, চিনি, সাবান হরেক জিনিস। তার চায় দেহাচ্ছাদনের পোশাক। তার চায় মাথা গুজবার ছাদ। তার চায় বিনোদন এর হরেক সামগ্রী। এগুলি সে শ্রম দিয়ে তো ফলায়নি। অন্যে শ্রম দিয়ে ফলিয়েছে। অনেকে করেছে। একজনে নয়। তার মানে কী দাঁড়ালো? না, শ্রম প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলেই মানুষ আর একক বা স্বতন্ত্র থাকে না। সে অনেকক বা সমষ্টি বা সমাজে যুক্ত হয়ে যায়। সে না চাইলেও তাকে সামাজিক হতে হয়। অর্থাৎ কী দাঁড়াল? শ্রম প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিকে যুক্ত হতে হয় বেঁচে থাকার তাগিদে। কিন্তু শ্রমপ্রক্রিয়াটা সামাজিক। অথচ সামাজিক এই শ্রমের সুতো থেকে মূল্য আহরণ করে তা কীভাবে সে ভোগ করবে বা আদৌ কিছু ভোগ করবে না সেটিতে সে পৃথক। স্বতন্ত্র। এখানে সে সামাজিক নয়।

মুশকিল টি কী? মুশকিল হল ঠেলায় পড়ে সামাজিক শ্রমক্ষেত্রে অংশ নিতে বাধ্য হলেও সেখান থেকে উৎপাদিত মূল্যের বিভাজনটি কি সামাজিক হয়? হয় না। কেন হয় না?

এই কেনটির উত্তর পেলে জীবনের অনেক কিছুরই উত্তর পাওয়া হয়ে যায়।

সেটি কী? যে লোকটি শ্রমে অংশ নিতে গেল সে কী সাথে নিয়ে গেল? দুটি জিনিস। এক, তার দেহ, দুই, তার মন। মানে তার রইল একটি দেহ-মন। যাকে সত্তা বলতে পারি। দেহমন যুক্ত এই ব্যক্তিসত্তা সামাজিক শ্রমে অংশ নিচ্ছে। এই সত্তার বৈশিষ্ট্য কী? এর বৈশিষ্ট্য হল সে আত্মকেন্দ্রিক। আত্মকেন্দ্রিকতায় সে উৎপাদিত মূল্যের সমস্তটায় দখল নিতে চায়। তাতে তার প্রয়োজন থাক বা না থাক। এ তার মজ্জাগত। যার পরিণামে উৎপাদিত মূল্য যেহেতু সীমায়িত, একজনের জবর দখল মানে অন্যের অপ্রাপ্তি, মানে অধিকার হরণ। এই অধিকার হরণের ক্ষমতা সবার সমান নয়। সেই জন্য শ্রমে উৎপাদিত মূল্যের সামাজিক অংশ অর্থাৎ উদবৃত্তের দখলদারিত্ব আজকের দিনে যেমন গুটিকয়েক কর্পোরেটের হাতে।

তার মানে একই সমাজে সকলে শ্রম দিলেও কারুর জুটছে কারুর জুটছে না। তাহলে ভোগান্তি।
এই ভোগান্তিতে যে ভোগে সে অশান্তিতে পড়ে। যে ভোগায় সেও শান্তি পায় না। তাহলে কী হয়? সমাজ অশান্তিতে ভোগে। এই অশান্তির আগুন থেকে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই দরকার সম্যক ভাবে গঠিত দল বা সংগঠন। যা এই সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির শান্তি ও নিরাপত্তার গ্যারেন্টার। অর্থাৎ সংগঠনই একমাত্র মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারে।

(৩) সংগঠনকে সম্যক ভাবে গড়ে তুলতে হয় কেন?
সংগঠন ভঙ্গুর হলে তার কার্যকারিতা থাকে না। আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিরা তার দখল নিয়ে নেয়। অশান্তি উৎপাটনে তার কোনোই ভূমিকা থাকে না। উলটে সেই সংগঠনই আর্থসমাজকে যাতনা দেয়। সেই সংগঠন কর্তৃক আর্থসামাজিক ক্ষমতা কব্জা হয়ে গেলে কী হয়

তা সমকালীন রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়।  সেই জন্য সংগঠনকে সম্যক হতে হয়।

(৪)কীভাবে সংগঠন সম্যক হবে?

তার প্রথম শর্ত আদর্শ। কোন আদর্শে ব্যক্তি সংগঠিত হবে? কী তার থিয়োরি? সেই তত্ত্ব যুগের প্রেক্ষাগত। প্রশ্ন উঠবে বস্তুগত আদর্শ কি যুগে যুগে আলাদা? না, আলাদা নয়। কিন্তু তার প্রযুক্তি আলাদা। তাহলে আদর্শটি কী? আদর্শটি হল শ্রীকৃষ্ণ তত্ত্ব। তার মর্ম? অচেতন-চেতন-দ্বন্দ্ব-দহন-মুক্তি ও অধিষ্ঠান চেতনিক এই বিবর্তনে ব্যক্তি চেতনার অধিষ্ঠান, আর আর্থসমাজিকভাবে তার প্রতিষ্ঠানী বাস্তবতা। চেতনিক এই বিবর্তনে অংশ নেয়া প্রতিটি ব্যক্তিই সেই সংগঠনের কর্মী যার চরিত্র দ্বান্দ্বিকতা বিশেষিত।

যে দ্বন্দ্বের একমেরুতে নেগেশন, অপর মেরুতে অ্যাফারমেশন। মানে একমেরুতে আত্মকেন্দ্রিকতা অন্যমেরুতে আত্মবিকেন্দ্রিকতা। সংগঠনে গ্রোথিত হয়ে ব্যক্তি তার আত্মকেন্দ্রিকতায় লাগাম দিয়ে আত্মবিকেন্দ্রকিতায় নিজের বিকাশ ঘটায় এবং বৃহত্তর আর্থিসামাজিক লক্ষ্য অর্জনে সবরকমের ত্যাগ স্বীকারে ব্রতী হয়। যে সংগঠনের নেতৃত্বও দেয় সে। নেতৃত্ব যূথের গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন দায়িত্বও নেয় সে। এখানে ব্যক্তিক সেন্টিমেন্ট যেমন পরস্পরের প্রতি ইগো, সন্দেহ, ঈর্ষা, ঘৃণা সহ সব ধরনের কাতরতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়েই সে সেই ডেডিকেশন অর্জন করে।

আর এই ধরণের ব্যক্তি সমূহের যূথ অর্থাৎ সংগঠন হয় নিশ্ছিদ্র। যা আর্থসামাজিক নেগেশন অর্থাৎ রক্ষণকামিতার বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনের যোগ্যতা রাখে।

(৫) সংগঠনের কর্মীবাহিনীর দ্বান্দ্বিকতা অর্জনে গৃহীত কর্মসূচি কি রাজনৈতিক/ সাংস্কৃতিক?

সাংস্কৃতিক কর্ষণেই এগজিস্টিং (Existing) রক্ষ চালিত আর্থসমাজের স্বরূপ চিহ্নিত করণ হয়। তাই সংগঠন গড়ে ওঠার প্রাক পর্যায়ে দীর্ঘ আর্থসমাজ সংস্কৃতির অধ্যয়ন অনুশীলন পর্ব। এই পর্বেই তত্ত্ব আহরণ ও তার অধিকৃতির অনুশীলন করতে হয়। সংগঠন গড়ে ওঠা থেকেই তার কর্মসূচিতে যুগপৎ সংস্কৃতি ও রাজনীতি দুই-ই থাকতে হয়। কারণ সংস্কৃতিহীন রাজনীতি মানেই রক্ষের কারবার। রাজনীতিহীন সংস্কৃতি বলে কোনো বিষয় বস্তুবিজ্ঞানে নেই। এককথায় প্রথম পর্বে যে সংস্কৃতিশীলন তা আসলে শিল্প রাজনীতি মানে পরোক্ষ রাজনীতি। আর পরবর্তী অধ্যায়ে পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ যুগলের যোগেই যুগরক্ষ কব্জা হয়।

তাই প্রাক পর্বের ভ্রূণ চর্চাতেই পরবর্তী পর্যায়ের অভিষ্ঠ ফল লাভ করা যায়। সাংগঠনিক নেতৃত্ব একথা স্মরণে রেখেই কর্মসূচির রূপরেখা প্রণয়ন করেন। উদাহরণ, লেনিনীয় নেতৃত্বে সোভিয়েত সংগঠনের সফলতা। কিন্তু মাও নেতৃত্বে সংস্কৃতি-রাজনীতির পূর্বাপর গুলিয়ে যাওয়ায় পরের পর্বে স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক কর্মসূচি নেওয়া হলেও তা ব্যর্থ হয়।

(৬) প্রাক-পর্বের কর্মসূচির প্রধান প্রধান দিকগুলি কী কী?

এর অঙ্গসংস্থানের গোড়াটাই হল ফাইন আর্টস চর্চা। যাতে হৃদয়বৃত্তি ও মস্তিষ্ক বৃত্তির যুগপৎ সাধনায় ব্যক্তি চরিত্র ব্যক্তিকতা বর্জনে অবজেকটিভিটি মুখীন হতে পারে। সুকুমার বৃত্তির চর্চায় ব্যক্তি তার অভিব্যক্তির যথার্থ প্রকাশে সক্ষম হয়।

এতে করে গণচরিত্র সংক্রমণী নিম্ন বিশেষণগুলি বর্জিত হয়ে ক্রমান্বয়ে জন ও রণ চরিত্র অর্জিত হয়।
উল্লেখ্য যে গণ চরিত্র ভাসমান। জন গণের থেকে পৃথক হলেও বা প্রশ্নবাচক চরিত্র অর্জন করলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। রণ চরিত্রই সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা রাখে। তাই এ পর্যায়ে সুকুমার বৃত্তি চার্চিক ব্যক্তির লক্ষ্য রণচরিত্র অর্জন অর্থাৎ নিজেকে নৈর্ব্যক্তিকতামুখীন করা।

ফাইন আর্টস এর বিভিন্ন আঙ্গিকের যথা সংগীত, নাটক, গল্প, অভিনয় ইত্যাকার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশের সুযোগ তৈরি করা।

একই সাথে জ্ঞান-বিশ্বাস-সংগ্রাম প্রত্যয়ে নিজেকে শক্ত করার লক্ষ্যে ইতিহাস, দর্শন, অর্থনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান বিষয়ে নিরলস অধ্যয়ন কর্মসূচি। যা স্টাডিগ্রুপ গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে খুব সহজেই করা যায়।

রক্ষণকামী ক্ষমতার দখল দারিত্ব প্রকট রূপে আসে অর্থনীতির সবটা পূর্ণ দখল দারির মাধ্যমে। তাই প্রতিটি কর্মীর জীবনপাঠে অর্থনীতির পাঠ অতি আবশ্যক। অর্থনীতির বস্তুগত রিডিং বিহীন কোনো কর্মী সংগঠনের কোনো কাজে আসে না।

(৭) সংগঠনের একক হিসেবে ব্যক্তি কীভাবে অগ্রসর হবে?

· à¦œà§à¦žà¦¾à¦¨-বিশ্বাস-সংগ্রাম তত্ত্ব প্রযুক্ত হয় জ্ঞান-শ্রম-যৌনতার ধারায়। মানে কী? মানে যে লোকটি সাংগঠনিক একক সে শ্রমে অংশ নেবে। রক্ষকবলিত আর্থসমাজ থেকেই মূল্য সংগ্রহ করবে। মূল্যের বিভাজন করবে। আবশ্যিক রেখে উদবৃত্ত সোশ্যাল ট্রাস্টে অর্পণ করবে।

· à¦¶à§à¦°à¦®à¦¸à¦¿à¦•à§à¦¤ ব্যক্তির জীবন সিঞ্চনী বিধায় তার যৌন জীবনও অতিগুরুত্বপূর্ণ। কারণ মূল্য বিভাজিত হলেও যৌনজীবনহীন যে শ্রম অস্তিত্ব বিজ্ঞান অনুযায়ী তা স্থানু। অর্থাৎ যৌন জীবনহীনতা ব্যক্তি চরিত্রে বস্তুমুখীন ঋজুতা আনতে দেয়না। ফলে সে নেতৃত্বে অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাই এদিকটিও সবিশেষ গুরুত্বে দ্রষ্টব্য।

· à¦°à¦•à§à¦· অধিকৃত সমাজের চলতি যত ধারণা-সংস্কার-ট্রাডিশন তার সমূল উৎপাটন। এই মূলোচ্ছেদ প্রক্রিয়া জ্ঞান-বিশ্বাস-সংগ্রাম এষণায় সংঘটিত করতে হয়। তার কর্মসূচি নেতৃত্বকে প্রণয়ন করতে হয়।

· à¦§à¦¾à¦°à¦£à¦¾ মূলোচ্ছেদ হলেই থেকে যায় দেহের বাধা। সেখানে লুক্কায়িত জড়। যার সংক্রমণে ব্যক্তিচরিত্রে জড়বাদি তাতক্ষণিকতার উপসর্গ আসে। তাই দেহ-মন নিয়ন্ত্রণ করার প্রকৌশল ছাড়া ট্রাডিশন বর্জিত হলেও ব্যক্তি চরিত্রে যথার্থ নেতৃত্ব-যোগ্যতা অর্জিত হয়না। এখানে অত:পর প্রয়োজন প্রাত্যহিক দেহ-প্রবন্ধ কর্মসূচির। যা অত্যাবশ্যকীয়। এই কর্মসূচিতে দেহমনের বলিষ্ঠতা অর্জন হলে জড় তাৎক্ষণিকতা সংক্রমণ রোধ করা যায়।

(৮) কথার শেষে

শ্রমসিক্ত জীবনের গতি আমাদের হাতেই। আমরা তা নিজের হাতে রাখব নাকি রাক্ষসের হাতে তুলে দেব সেই দায়ও আমাদেরই।

গণ-জন-রণের একক সমাহার রূপ আর্থসমাজের শান্তি হরণকারী শ্রমচোর কর্পোরেটি দাপটকামিতা আর তার দোসর সমকাল ক্ষমতা চক্রকে বুকের উপর থেকে নামাতে গেলে বস্তুভিত্তিক সংগঠনে সংগঠিত হতেই হয়। এর কোনো বিকল্প মানব জাতির জীবনে নেই।

তাই সে সংগঠনের একক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে আলোচ্য লেখাটি আপনার অনুভূতিতে সামান্য আঁচড় দিতে পারলেই শ্রম বিফল হয় নি বলেই বিবেচিত হবে।

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::