ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

গল্প

অপরিচিতা

একজন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিহিতা মহিলা এসেই জানতে চাইল, বাবা কেমন আছো?

আমি সহাস্য মুখে জানালাম, ভালো আছি। আপনি কি আমাকে চেনেন!?

'না, আসলে তোমার মতোই আমার একটা ছেলে আছে। জানো ও খুব ভালো।'

'আচ্ছা, তো আপনার ছেলে কী করে?'

'একটা দোকান দিয়েছে। দোকানটা খুব ভালো চলে। দেখে শুনে একটা বিয়েও দিয়েছি।'

আমি সহাস্য মুখে বললাম, তা বেশ তো। আপনি এখানে বসুন।

পাশের ফাঁকা জায়গাটা দেখিয়ে দিলাম। উনি না বসেই বললেন, জানো, ছেলেটা বৌমাকে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ি গেছে...

আমি হাসি হাসি মুখে জানতে চাইলাম, কবে গেছে? মন খারাপ করছে নাকি ছেলে বৌমার জন্য?

'সে তো করছেই... তবে ওরা চলে আসবে খুব তাড়াতাড়ি।.... জানো, আজ সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয় নি।'

তার একথা শুনে অবাক হই। ছেলে শ্বশুর বাড়ি গেছে বেশ কথা। তার সঙ্গে না খেয়ে থাকার যোগটা  মাথায় আসে না। ছেলে ব্যবসা করে, অভাবের তো কোনো কারণ থাকার কথা নয়!

পাশেই একটা স্টল ছিল। দশ টাকা দামের একটা কেকের প্যাকেট কিনে তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। উনি বললেন, তুমি খুব ভালো, কিন্তু আমাকে ভিখিরি ভাবছো না তো?

নানা প্রশ্নের ঝড় দূরে সরিয়ে ব্যস্ত হয়ে বললাম, না না। আপনি আমাকে আপনার ছেলের মতো বলেছেন, আমি কি তা ভাবতে পারি! তাছাড়া কোনো ভিখিরিই এমন সুন্দর ভাবে ভিক্ষে করতে পারবে না।

 à¦•à§‡à¦•à§‡à¦° প্যাকেটটা কেটে আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়, বাবা, তুমিও নাও।

 à¦†à¦®à¦¿ নিতে না চাইলে একরকম জোরাজোরি করে। স্বর্গবাসী মায়ের মুখটা আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ওঠে। একটা কেকের পিস নিয়ে মুখে দিলে তবেই তিনি কেক খাওয়া শুরু করলেন।

'বাবা তোমাকে আর বিরক্ত করবো না, আসি, ভালো থেকো।' মহিলা চলে যায় হাসি মুখে। স্টলটি থেকে এক বোতল জল নিতে নিতে তার ব্যাপারে জানতে চাইলাম।

লোকটি জানায়, মহিলার স্বামী নেই। তার স্বামী ছিল জাত মাতাল। সরকারি চাকরি করতো একটা। কিন্তু বিশৃঙ্খল জীবন যাপন করে সব উড়িয়ে দিত। ছেলেকে মহিলা আগলে আগলে বড়ো করে। তার স্বামী মারা যাবার পর, অনেক কষ্ট করে একটা দোকান করে দেয় ছেলেকে। একটা বিয়েও দেয়। আর বিয়ে দেওয়ার পরই সমস্যা শুরু। এখন তারা অন্য যায়গায় ঘর নিয়ে থাকে। পেনশনের টাকা তারাই তোলে। মাঝে মাঝে কিছু হাতে তুলে দিয়ে যায়, ওই টুকুই! মহিলাকে দেখলে বোঝা যাবে না, কিন্তু উনি এখন একজন পাগলি মাত্র!

লোকটি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আমি দূরের পানে চেয়ে মহিলাকে খুঁজতে থাকি।

প্লাটফর্মের সেডের কার্নিশে কয়েকটি পায়রার বাচ্চার এতক্ষণের  কিচিরমিচির শব্দ একটি পায়রা উড়ে এসে বসতেই থেমে গেল।

 

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::