ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

কর্পোরেট বান্ধব কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২১

শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারামন ২০২১ সালের বাজেট পেশ করলেন। বাজেট পেশের আগেই দেশের অর্থনীতির হাল বিষয়ক আর্থিক সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে পরিষ্কার ছিল কয়েকটি বিষয়- ১। দীর্ঘ লক ডাউন জনিত কর্মহানিতে জনতার আয়হীনতা। ২। বেকারত্ব ৩। কৃষক অসন্তোষ। ৪। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার অবস্থা সঙ্গীন।

অর্থনীতির ডিম্যাণ্ড হীনতা করোনা মহামারির পূর্ব থেকেই ছিল। মহামারি জনিত লকডাউনে তা আরো নিম্নমুখী হতে হতে চরমবিন্দুর দিকে যাচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির নিয়মেই চাহিদা সৃষ্টি করা অত্যন্ত দরকার। দরকার ১০০ দিনের মতো প্রকল্পের ব্যয়বরাদ্দ। জনতার হাতে অর্থের জোগান।

কিন্তু বাজেটে কী দেখা গেল?

একগাদা বাক্যালংকার মিশ্রিত  কর্পোরেট আয় ব্যয় ও মুনাফার সালতামামি। ভোট জনিত লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সহ আরো কয়েকেটি রাজ্যের পরিকাঠামো ব্যয়বরাদ্দ বাবদ কিছু টাকা। কর্মসংস্থান গ্যারান্টি খাতের ৪২শতাংশ সংকোচন। কৃষিতে ব্যবহার্য পেট্রোপণ্যে নতুন সেস আরোপ। মধ্যবিত্তের ট্যাক্স সংক্রান্ত কোনো সুবিধা থাকল না। থাকল কী? যা থাকল- তা হল রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলির বিক্রি বাবদ টাকা তোলা।

গৌতম আদানি বাজেটের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। তিনি বললেন বাজেট অভূতপূর্ব। আত্মনির্ভর ভারত গড়ার লক্ষ্যে সঠিক পদক্ষেপ। জাতীয় স্বার্থেই পলিসি নেওয়া হয়েছে। ইনার কথা উল্লেখ করার কারণ এই নামটি বর্তমান সরকারটি ক্ষমতাসীন হবার পর থেকেই চর্চিত। বিরোধী দলগুলি সমস্বরে যে দুয়েকটি নাম ক্রোনি কর্পোরেট হিসেবে উল্লেখ করে তার মধ্যে এটিই সর্ব অগ্রগণ্য। তিনি ভারতীয় কর্পোরেটের প্রতিনিধি স্থানীয় ব্যক্তিত্ব। অর্থাৎ সরকার যে বাজেট পেশ করেছে, তা যে কর্পোরেটদের খুশি করছে তার কথাতেই তা প্রমাণিত। বিরোধী দলগুলি সরকারের বাজেটকে প্রো কর্পোরেট ও দেশীয় সম্পত্তির বিক্রির বৈধতা হিসেবে উল্লেখ করেছে। জনগণের হাতে টাকা দেয়া যেখানে ভঙ্গুর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতো তার উল্টোটাই করা হয়েছে। গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি খাতে ব্যয় কমানো যার দৃষ্টান্ত।

অর্থনীতিকে বলা হয় রাজনীতির ঘনীভূত প্রকাশ। সেইজন্যই অর্থশাস্ত্রের জনকরা অর্থনীতি অর্থে পলিটিক্যাল ইকোনোমি কথাটি ব্যবহার করেছেন। সে অ্যাডাম স্মিথ বা রিকাডো কিংবা মার্কস হোন। অর্থাৎ অর্থনীতির আলোচনা রাজনীতি বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। বা অন্যভাষায় রাজনীতির স্বরূপ অনুযায়ীই অর্থনীতির স্বরূপ খুঁজতে হয়। তাহলে ভারতীয় রাজনীতির স্বরূপটি কী? যা থেকে এখানের গৃহীত অর্থনীতির ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব?

তা হল উগ্র রিলিজিয়াস জাতীয়তাবাদ। এর নিজস্ব কোনো অর্থনীতিক মতাদর্শ নেই। কর্পোরেট মনোপলির সে পৃষ্ঠপোষক। এই উগ্র রিলিজিয়াস জাতীয়তাবাদকে টিকে থাকতে হলে দরকার জনগণের চরম বশ্যতা। এক নেতার প্রতি আনুগত্য। বশংবদ প্রেস। আর স্বার্থবাহী কর্পোরেট প্রতিভূ।

জনগণের চরম বশ্যতা অর্জন করা যাবে কীভাবে? জনগণের আর্থিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কল্যাণ হলে তা সম্ভব নয়। তাই সার্বিকভাবে জনতাকে দূর্দশাগ্রস্ত করতে হবে। যাতে বশ্যতা অনিবার্য হয়। সেই লক্ষ্যেই ২০১৪ থেকে গত ৭ বছর আর্থিক নীতিমালা প্রণয়ন হচ্ছে।

উল্লিখিত রিলিজিয়াস জাতীয়তাবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য এলিটদের নিরঙ্কুশ বশ্যতা এবং গণমাধ্যম ও সেই এলিটদের সহযোগিতায় ব্যাপক জনতাকে সেই এক বগ্গা জাতীয়তাবাদের পক্ষে আসতে বাধ্য করা। এর অন্যথা হলেই দেশবিরোধী তকমায় বিরোধীকে গুড়িয়ে দেওয়া। পরিণামে দেশের বর্তমান ক্ষমতা যতই জনবিরোধী ও প্রোকর্পোরেট আর্থিক নীতি নিক না কেন তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিরোধী রাজনীতি গড়ে ওঠাই মুশকিল। মুশকিল অন্য একটি কারণেও। সোভিয়েত ব্লকের পতনের পর নিওলিবারেল মতবাদের বিপরীতে পরিকল্পিত অর্থনীতি সমন্বিত রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসন্ধানহীনতা সেই কারণ। প্রকারান্তরে স্বাধীনোত্তর ভারতে বিশ্বায়ন পরবর্তী সময়ে সেই নিওলিবারেল মতবাদের প্রতিক্রিয়ায় বর্তমান ক্ষমতা তখত এ আসীন। মানে তখনো ক্ষমতা প্রো কর্পোরেটই ছিল। কিন্তু কোথাও একটু চেকস এ্যাণ্ড ব্যালান্সের ব্যবস্থাও ছিল। তা যতই থাকুক, জনগণের জীবনমান তার দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। এরই ফাঁক গলে সেই অন্তঃসলিলা জনবিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান উগ্র জাতীয়তাবাদ ক্ষমতা দখল করেছে। বর্তমান বাজেটের মত বিগত ৬ বছরের বাজেটেও একই রকম জনবিরোধী ও প্রোকর্পোরেট পলিসি প্রণয়ন হলেও জনতা ভূতপূর্ব নরম জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করছে না। বা বলা যায় ক্ষমতা-হারারা জনগণকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার প্রায়োগিক নীতি-কৌশল প্রণয়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

এই ব্যর্থতা যত দিন বর্তমান ক্ষমতা তত দিনই নিরঙ্কুশ। অর্থাৎ চোরে চোরে মাসতুতো ভাই ছেড়ে ডাকাতে ডাকাতে পিসতুতো ভাই গ্রহণ করে জনগণের নাভিশ্বাস উঠলেও তার থেকে পরিত্রাণ নেই।  

 

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::