ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

গল্প

আশীর্বাদ

অনন্যা সারারাত ঘুমোতে পারে না। দারুণ একটা এক্সাইটমেন্ট। কখনো চোখ খোলা রেখে, কখনো চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে। নানা রকমের কল্পনার জাল বুনতে থাকে সে।

শ্বাশুড়ি মা তাকে দারুণ ভালোবাসে। কোনো কাজ করতে দিতে চায় না। অনন্যার খুব খারাপ লাগে। সে রান্না করতে ভালোবাসে। শ্বাশুড়ি মাকে অনেক বুঝিয়ে  ম্যানেজ করে। শ্বশুর মশাই বড়ো বড়ো চিংড়ি নিয়ে এসেছে। অনন্যা নারিকেলের দুধ দিয়ে মালাইকারি করেছে। সবাই খুব প্রশংসা করছে। সৌভিক তো মিষ্টি হাসি দিয়ে চোখের ইশারায় তারিফও করে।

সৌভিক স্কুল যাচ্ছে পরিপাটি হয়ে। গলায় টাই পরিয়ে দেয় অনন্যা। সৌভিক জড়িয়ে ধরলে 'ধ্যাৎ!' বলে লজ্জায় দূরে সরে যায়। স্কুল থেকে সৌভিক বাসায় ফিরলে শ্বশুর শ্বাশুড়িকে কফি করে দিয়ে নিজেদের জন্য কফি নিয়ে সৌভিক ও সে ছাদে যায়।  সন্ধ্যার আকাশে তখন আবির ছড়ানো। সৌভিক বারবার অনুরোধ করে গান শোনানোর জন্য। অনন্যা কফিতে একটা চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুরু করে....  'এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়, এ কী বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু...'

'এই অনন্যা, দিদি' অনন্যার ছোট বোন অরণ্যা নাড়া দেয় অনন্যাকে। অনন্যার গান থেমে যায়, অরণ্যা বলে, 'এতো রাতে গান গাইছিস কেন? আমার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে তো।'

সকালে ঘুম ভাঙতে একটু দেরি হয় অনন্যার। অন্যদিন খুব সকালেই ওঠে, রাত করে শুয়েছে বলেই হয়তো দেরি হল। চারিদিকে তখন একটা রৈ রৈ ভাব। বাড়ির বড়ো মেয়ের বিয়ের দিন হবে বলে কথা। পিসিমা , কাকিমারা সকাল থেকেই ব্যস্ত।  অনন্যার একমাত্র বৌদি শিবানী অনন্যাকে দেখে টিপুনি কাটে, এই যে মাস্টারের বৌ, আমরা খেটে মরছি আর তুমি রাজরানির মতো ঘুমোচ্ছো।

সকলের সামনে এ ভাবে সম্বোধনে লজ্জা পায় অনন্যা।  'ডাকোনি কেন?' বলে সেও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

দুপুরে সৌভিকের বাড়ির লোকদের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে অনন্যাকে সকলের সামনে সাজিয়ে নিয়ে আসে তার বৌদি।  বিয়ের দিন ঠিক হওয়ার আগে আশীর্বাদটা হয়ে যাবে। সব পর্ব মিটে গেলে ছেলের বাবা অনন্যাকে বলেন, মা বিয়ের পর তুমি আর গান করতে চেও না। ওসবে বাড়ির পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।

অনন্যা অসহায় বোধ করে। কী বলবে বুঝতে পারে না। বাবার দিকে ছলছল চোখে চায় অনন্যা। হবু বেয়াই-এর কথা শুনে অনন্যার বাবা হরিমোহন বাবুও শকড। মেয়ের করুণ মুখ দেখে আর চুপ থাকতে পারলেন না। বললেন,  আপনাদের অপমান করার জন্য বলছি না, তবে আপনি একজন শিক্ষিত,  আপনার ছেলেও একজন স্কুল টিচার, এই রকম শিক্ষিত পরিবার থেকে এটা প্রত্যাশা করিনি! আমার মেয়ে ভালো গান গায়, যে পরিবার আমার মেয়ের গান কেড়ে নিতে চায়, ভালোলাগা কেড়ে নিতে চায়, সেখানে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেব না।

না এরপর আর অনন্যার বিয়ের দিন ঠিক হল না। সৌভিকের পরিবার আর কথা না বাড়িয়ে ফিরে গেল। রাতে অনন্যাকে ফোন করে সৌভিক। সৌভিক পরিচয় দিলে জানালার কাছে গিয়ে অনন্যা বলে, বলুন।

জানালার ফাঁক দিয়ে  চাঁদের আলো পড়তে থাকে অনন্যার মুখের উপর।

 

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::