ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

গল্প

সরীসৃপ

কিংশুক সন্নাসী

সেন্ট্যা রে সিমেন্টের দোকানে গেলি ন্যা, ক্যাল জি ছাদ ঢালাই করতে হবে।

আব্বা আমি তো ক্যাল সকালে গেছিল্যাম, সিমেন্ট আলা বলেছে চুরি করে মাল দিতে হবে। দাম বস্তায় ১০০ টাকা বেশি ল্যাগবে। লক ডাউন চলছে।

হ্যা রে রড যুদি আগে কিন্যা না থ্যাকতো, তাহলে তো আজ অনেক টাকা গাচ্ছা লাইগতো রে। কিন্তু  প্রত্যেকদিন ঝড় ম্যাঘ করছে, মাথা গোঁজার যে চালা তুললি, তা তো এক ঝাপটায় উড়্যা যাবে। না না যেমন কর‍্যা হোক ঢালাইট্যা না করলে থাকা যাবে না।

আব্বা তার কাছে তো আগেই ধার আছে। দোকানি বুল্যাছে, এই বাজারে ধার দিতে পারবে না। সবাই সিমেন্ট চাইছে।

তুই বেশি বকিস ন্যা। আগে যা তো। দ্যাখ কী বলে।

সেন্টু সিমেন্টের দোকানে যায়। ঘর ভেঙে পাকা ঘর করছে সেন্টুর বাবা পিয়ারুল। এক রকম জান মেরেই তার এই বাড়ি হচ্ছে।

আব্বা সিমেন্ট আলার সাথে কথা বুলল্যাম। দিবে কিন্তু লগদ টাকা লিবে। টাকা ছাড়া মাল দিবে না। সে বুল্যাছে, তার নাম যেন কাউকে না বুলি।

পিয়ারুল পরের দিন কোনো রকমে টাকা জোগাড় করে সিমেন্ট আনে। ঢালাই এর কাজ শুরু হয়। ঢালাই চলছে, এমন সময় ডাক আসে, পিয়ারুল ভাই, পিয়ারুল ভাই, এদিকে একটু আস্যেন।

কাপাসডাঙ্গার সুদখোর সাল্লাম এসে হাজির। এলাকার মাস্তান গোছেন ব্যক্তি। চুরি ডাকাতিসহ নানান অসামাজিক কাজেও যোগ আছে বলে শোনা যায়। মেম্বার-প্রধানের দালাল রূপে থাকে।

কী বুলছেন সাল্লাম ভাই।

আপনি এই লকডাউনের মধ্যে ঢালাই করছেন। পুলিশ আসলে তো ধর‍্যা লিয়্যা যাবে সবাইকে।

কী করবো ভাই, আজ সাতদিন থেকে সেন্টারিং হয়্যা পড়্যা আছে। ঝড়-ম্যাঘ হল্যে রডগিলি জং ধর‍্যা যাবে।

সে তো ঠিক আছে, কিন্তু সরকার কী আপনার কথা শুনবে। দেখছেন না সব বন্ধ কর‍্যা দিয়্যাছে। আমাদের কে নজর রাখত্যে বুল্যাছে প্রধান-মেম্মার। বার বার প্রচার হচ্ছে, আপনি শুনতে পাচ্ছেন না।

কী করবো ভাই, লোকজন লাগিয়্যা দিয়্যাছি।

কাজ বন্ধ করেন। শুনেন, এদিকে আসেন। দ্যাখেন এরকম কর‍্যা কাজ করলে ঝামেলা। দেখি একটা বিড়ি দেখি। আমি সব ম্যানেজ করবো। আর কাউকে কিছু বুলবেন না। দেন ৫ হাজার টাকা দেন।

সাল্লাম ভাই, আপনারা তো জানেন, আমি সরকারি বাড়ি পাইনি। ব্যাটাটা বিদ্যাশে খাটতোক বল্যা কোনো রকমে এই দুখ্যান ঘর তুল্যাছি। সব দোকানে ধার আছে। আজ সিমেন্ট আনল্যাম তাও ধার কর‍্যা। বেশি টাকা দিয়্যা।

কী বুলছেন সব। ওসব কথা কী আর পুলিশেরা শুনবে। সিভিকর‍্যা সব ঘোরাঘুরি করছে। তাদের বুল্যাছি, আমি দেখছি।  আর এই টাকা কি ভাবছেন আমি লিব।। সব থানাতে দিতে হবে।

পিয়ারুলের মাথাতে কিছু কুলায় না। তার ছেলে সেন্টু আসে। বাপ-ছেলে তর্কাতর্কি বেধেঁ যায়। ছেলে বলে, আমি তোমাকে কত কর‍্যা  মানা করল্যাম শুনল্যা না।

পিয়ারুলের স্ত্রী এসে সব শুনে বলে, যে টাকাটা ধার কর‍্যা জোগাড় কর‍্যাছো সেখ্যান থ্যাক্যা ২ হাজার টাকা না হয় দ্যাও।

সাল্লাম ভাই, নেন বিড়ি খান। এই ২ হাজার টাকা রাখেন।

কী বুলছেন তাই হয়। আমাকে তো বিপদে ফেল্যা দিলেন। থানাকে কী কর‍্যা ম্যানেজ করবো।

আপনাকে আগেই তো বলল্যাম ভাই, ধারের উপর ঢালাই করছি। ঢালাই এর লোক গুল্যাকে এই টাকাটা দিবো বুল্যা রাখ্যাছিনু।

দ্যাখেন এই কথা আর কাউকে বুলবেন না। দেখি কী করা যায়।

সাল্লাম টাকা নিয়ে বাইক চড়ে  কাপাসডাঙ্গার মোড়ের দিকে চলে যায়। যত তাড়াতাড়ি পারবেন ঢালাই শেষ করেন।

পিয়ারুল মনে মনে বলতে থাকে, শোরের বাচ্চারা যা না ঐ শিমুল ডাঙ্গার জাব্বারের ঢালাই এর টাকা লিতে।

 

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::