ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

গল্প

দিশা

আব্দুল মোমিন

টাক মাথা, হাতে হেলমেট, কাঁধে ব্যাগ 45 বছর বয়সি একজন মানুষ কলেজস্ট্রিট থেকে ধর্মতলাগামী বাসে গেটের সামনে সিনিয়ার সিটিজেন সিটে বসে আছেন। বাস ফাঁকা থাকায় ড্রাইভার এর পাশে লেডিস সিটে 40 বয়সের ঊর্ধ্বে কয়েকজন ব্যক্তি বসে আছেন। বাস কনডাক্টর গেটে দাঁড়িয়ে চেঁচাতে থাকে– ধর্মতলা ধর্মতলা বাবুঘাট হাওড়া । কনডাক্টর হেলমেট ওয়ালা ব্যক্তির কাছে ভাড়া চাইতে গেলে ওই ব্যক্তি বলেন– তুমি যে বললে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ধর্মতলায় পৌঁছে যাবে? এখন পৌনে ছয়টা বাজছে।

বাবু কাল লকডাউন। বিভিন্ন গাড়ি রাস্তার সাইডে পার্কিং করছে। তাই বেশি জ্যাম হচ্ছে। কী করবো বলেন তো? আপনারাও পারেন ধর্মতলার বাসটাই আর পাওয়া যাবে না। চারিদিকে মিথ্যাচারে ভর্তি হয়ে গেছে।

মাথা নিচু করে, মুখ কাচুমাচু করে ভাড়া নিয়ে কিছু না বলেই গেটে গিয়ে আবার চেঁচাতে থাকে, ধর্মতলা ধর্মতলা বাবুঘাট হাওড়া।

কিছুক্ষণ পর আবার ওই ব্যক্তি কনডাক্টরকে বলে– আপনাদের কারণে আমি আজ ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারবো না। আমার বাড়ি যেতে সমস্যা হয়ে যাবে। কনডাক্টর কিছু না বলে বাইরের দিকে মুখ করে চেঁচাতে থাকে।

মেঘলা আকাশের জন্য পৌনে ছটাতেই অন্ধকার হয়ে গেছে। বাস জ্যামে দাঁড়িয়ে আছে। গেট দিয়ে রাস্তার পাশে বড় বটগাছের নিচে বন্ধ ত্রিফলা ল্যাম্পপোস্ট দেখিয়ে একটু উচুস্বরে ওই ব্যক্তি ড্রাইভার এর পাশে লেডিস সিটে বসে থাকা মানুষদের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে- দেখেছেন চোরেদের অবস্থা, ল্যাম্পপোস্ট গুলো দিয়ে কী হয়েছে? মানুষের উপকার হয়েছে ? যা হয়েছে ওই পার্টিটার আর চোরেদের। মানুষ বুঝিয়ে দিবে, এবার ঠিক বুঝিয়ে দেবে ভোট দিয়ে। 'রাজা বলে একবার প্রজা বলে বারবার' প্রবাদের মতো লেডিস সিটে বসে থাকা মানুষগুলো সম্মিলিত ভাবে বলতে থাকে, হ্যাঁ হ্যাঁ এবার বুঝিয়ে দেবে।

কথোপকথন শুনে বাসের পেছনের সিটে বসে থাকা একটি কলেজ পড়ুয়া ছাত্র কালো রঙের বইয়ের ব্যাগ কাঁধ থেকে খুলে পায়ের উপর রেখে হেলমেট ওয়ালা মানুষটির পাশের সিটে বসে। হাতে সেনিটাইজার ঘষতে ঘষতে ছেলেটি সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে– কাকে ভোট দেবেন? সকলে চুপ হয়ে যায়। মানুষটি ছেলেটার দিকে কিছুটা ঘুরে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নরম কণ্ঠস্বরে জিজ্ঞাসা করে- তোমার নাম কী ভাই?

নামের সাথে প্রশ্নের কী কোনো সম্পর্ক আছে? আপনি বুঝি মুসলিম কাউকে খুঁজছেন? বলুন কাকে ভোট দেবেন?

সামনে পেছনে সবার দিকে তাকিয়ে, রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে, মাথার মাস্ক ঠিক করে হেলমেট ওয়ালা ব্যক্তিকে আবার বলে- আপনি যেসব নিয়ে আলোচনা করছেন বা অন্যরা যেসব নিয়ে আলোচনা করছে সে সবগুলিই হচ্ছে সমস্যা। যেসব সমস্যায় আমরা সকলে জর্জরিত। সেগুলো নিয়েই কাঁটাছেঁড়া করছি। আপনি বলুন এর সমাধান কী? কী হবে আমাদের পথ? কে দেখাবে আমাদের মানবতামুখীন পথের দিশা? কোন পথে আমরা চলবো? যাতে আমাদের বেকারত্বের সমাধান হবে, সার্বিকভাবে মানুষের উন্নতি ঘটবে। জাতি-ধর্মের নামে, আঞ্চলিকতার নামে, দলের নামে মেরুকরণ বন্ধ হবে।

তুমি বলো দিদি কী ঠিক কাজ করছেন?

না। দিদি ঠিক কাজ করছেন না। আপনি বলুন কে কাজ করছে? কাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে চাইছেন।

তুমিই বলো আমাদের কী করতে হবে?

তাহলে আপনার কোনো সুচিন্তিত ভাবনা নেই। আপনিও একজন দিশাহারা মানুষ। আর দিশাহারা মানুষ কখনো মানুষকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে না। আপনি বরং ওই দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষদের কে

অন্ধকারের দিকে চালিত করছেন। যা একজন রক্ষ করে থাকে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি মুক্ত ভারত গড়ে তোলায় সচেষ্ট হয়েছেন।

ওহ! আচ্ছা! তাহলে আপনি একটি দলের হয়ে অন্য দলের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। আপনি আত্মখোলস থেকে অন্যের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। লুকিয়ে থেকে কথা বলা রক্ষেরই কাজ। 

আপনি বলুন কেন আপনার দলকে ভোট দেব? তারা মানুষের তথা দেশের উন্নতির জন্য কী রূপরেখা তৈরি করেছে? যা সকলে অনুসরণ করবে।

আরো কিছু পিঠে বইয়ের ব্যাগ ছাত্র ওই তর্ক করা ছাত্রের পাশে এসে দাড়ায় এবং ছাত্রটিকে সাপোর্ট করে। ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে হেলমেট এক হাত থেকে অন্য হাতে বদল করে মানুষটি কনডাক্টরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করে- আর কতক্ষণ লাগবে ধর্মতলা যেতে?

...স্যার এই জ্যাম পার হলেই ধর্মতলা।

আর আপনার জ্যাম! হেলমেট নিয়ে নেমে যায়। আর বলে আমার আগেই চলে আসলে আমাকে তুলে নিও।

কিছুক্ষণ পরেই জ্যাম খুলে যায়। কনডাক্টর হাসিমুখে ওই ব্যক্তিকে বারবার ডাকতে থাকে। কিন্তু তিনি আর বাসে ওঠেন না।

 

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::