ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

গল্প

মেঘলা

আল আমিন

 

বৈশালীকে বারবার ফোন করেও পায় না অমল। অমলের সবচেয়ে বড়ো দোষ সে অল্পতেই  বিরক্ত হয়ে ওঠে। বারবার কল করে না পেয়ে রাগে শরীর ঝিম ঝিম করে।

অনেকক্ষণ পর কল ব্যাক করে বৈশালী।

গজগজ করতে করতে অমল বলে, 'যদি অ্যাকসিডেন্ট করে মরার সময় হয়, আর আমি ভাবি আমার গুপ্তধন কোথায় আছে বলে যাবো, সেটাও তো সম্ভব নয়। আমাকে তো হারাবেই, সাথে সাথে গুপ্তধনও মিস করবে নাকি?'

 বৈশালী আর অমলের সাপে নেউলের সম্পর্ক। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। বৈশালী ঝাঁজিয়ে ওঠে, 'আমি তো সকাল থেকে বসে আছি! একটু ফোনে পাওনি তো কি এমন অসুবিধা হয়েছে? গুপ্ত ধন আমার লাগবে না, তোমার চোদ্দগুষ্টিকে দিয়ে যেও।'

অমল সরকারি চাকরি করে। বাড়িতে বাবা-মা আর বউ থাকে। এক বোন আর এক দিদি আছে। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। বোন দিদিদের চাহিদা প্রচুর। যেহেতু সে চাকরি করছে অতএব তাকেই সব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তার মা বাবার সঙ্গে সঙ্গে সে নিজেও মনে করে তা। সেই মতো অবিবাহিত ছোট বোনের বিয়ের সমস্ত খরচ সে নিজে করেছে। এবং তার জন্য তাকে সুদে টাকাও নিতে হয়েছে। এমন কি লাখ খানিক টাকা দিয়ে একটা সোনার নেকলেস বড় দিদিকেও দিতে হয়েছে। দিতে হয়েছে বলার চেয়ে বলা ভালো তার বড় দিদি চেয়ে নিয়েছে। ছোট বোনের জন্য এতো খরচ করছে অথচ চাকরি পাওয়ার পর নাকি তাকে কিছুই দেয় নি তা অনেকবারই বলেছে সে। চাকরি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় পোষাক আশাক থেকে অল্প বিস্তর টাকাও দিয়ে এসেছে দিদিকে। তারপরেও দিদির অভিযোগে একরকম ক্ষিপ্ত হয়েই তাকেও ছোট বোনের বিয়ের সময় এই গয়নাখানি দেয়।

ছোট বোনের বিয়ের বছর তিনেক পর অমলের বিয়ে হয়। বিয়ের খরচ জোগাড় করতে বোন দিদিকে লাখ দুয়েক টাকার ব্যবস্থা করে দিতে বলে। তারা হাত তুলে নেয়। তার বউকে শাড়ি দেওয়া ছাড়া তারা আর কিছুই করে নি। সমস্ত গল্পের ওর মাধ্যমে শুনেছে বৈশালী। তাই সুজোগ পেলেই সেও দু'কথা শুনিয়ে দিতে কুন্ঠা বোধ করে না।

'চোদ্দগুষ্টি' শব্দটা বিষের মত কাজ করে। অমলের শরীর মন সবই যেন জ্বালা করে ওঠে। গালি দিয়ে বলে, 'সবই যদি চোদ্দগুষ্টিকে দিয়ে দেব, তাহলে তো ভিখিরি হয়ে যাবে তুমি।'

এ ভাবেই মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেগে থাকে দু'জনের। দিন গড়ায় কিন্তু তাদের সম্পর্ক সেই একই ধারায় বয়ে চলে। প্রতি নিয়তই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মন মালিন্য। অন্যদিকে তার দুই বোন-দিদিও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জটিলতা তৈরি করে। কখনো সীমা অতিক্রম করে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে তা।

এই তো সেদিন সামান্য একটা বিষয় নিয়ে শুরু হলো। ছুটিতে ইমার্জেন্সি ডিউটি থাকে অমলের। তাই সব পুজোতে ছুটি পায় না সে। এবারও পায় নি। বউ পুজো দেখতে যাবে বলে বাপের বাড়ি গেছে। তার পরের দিনই বড়ো দিদির ফোন।

'হ্যালো'

'হ্যা, দিদি বল।'

'তোরা পেয়েছিসটা কি!' তীক্ষ্ণ ভাবে আক্রমণ করে অমলের দিদি।

অমল বুঝতে পারে না কি হয়েছে। দিদির তীক্ষ্ণ কথা সে নিতে পারে না, 'অত ভনিতা না করে বল কি হয়েছে।'

'তোর বউয়ের একার কি পুজো, আর আমার বাবা মার কোনো পুজো নেই!'

'কি হয়েছে !'

'পুজোতে বাড়ি ঘর ফেলে রেখে চলে গেছে। বাবা মা কি পাহারাদ্বার!'

'এত জটিলতা না করে, সমস্যাটা কি হয়েছে বল!'

'জানোয়ার, সমস্যা কি হয়ছে!, বউকে তোললায় দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে নিয়ে নাচছিস!'

এবার অমল চিড়বিড় করে ওঠে, বলে, 'আমার বউ আমি মাথায় তুলে নাচবো নাকি মাথায় তুলে আছাড় মারবো সেটা আমি ভাববো, তোর না ভাবলেও চলবে। অনেক জ্ঞান দিয়েছিস ফোন রাখ, না হলে আরো বাজে কথা শুনবি।'

উল্টো দিকে দিদির কান্নার আওয়াজ আসে। ফোন কেটে যায়।

সেদিনই রাতে বৈশালী কল করেই ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে, 'তোমার দিদির সাহস কি করে হয় আমাকে আজে বাজে কথা বলার।'

অমল বুঝতে পারে ব্যাপারটা। অমলের সঙ্গে কথা বলেই দিদি যে ব্যাপারটা ছেড়ে দিয়েছে তা নয়। হয়তো বৈশালী ফেরার পর তাকেও কথা শুনিয়েছে।

'কি হয়েছে?'

'ন্যাকামি করো না, তোমার দিদি তোমাকে দুপুরে ফোন করেনি!'

'কে ফোন করেছে আর কে করেনি সেটা তোমার দেখে লাভ নেই। তোমার সঙ্গে কি হয়েছে সেটা বলো।' খিঁচিয়ে বলে অমল।

'আমি কি করবো, কোথায় যাবো, ওকে আমি কৈফিয়ৎ দেব কেন!'

'দিতে হবে না। আমি ফোনে যা বলার বলেছি। তুমি ফালতু ওর সঙ্গে লাগতে যেও না।'

অমলের দিন গুলো যেন খুব ঘন কুয়াসায় আচ্ছাদিত হয়ে উঠছে। এক সময় জীবনের সব কিছুই খুব স্বচ্ছ মনে হত। পরিশ্রমী হওয়ায় কখনো কোনো বাঁধাকে জীবনের ভালো লাগার প্রতিবন্ধকতা মনে হয়নি। অভাবের সংসারে অনেক দিনই সকালে মুনিশ হিসাবে অন্যের জমিতে বিভিন্ন রকমের শ্রম দিত। বিকেলে ফুটবল খেলা। আর রাতে চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। তার বিশ্বাস ছিল সরকারি চাকরি সে পাবেই। সেই চাকরিও হল। কিন্তু তার চিরাচরিত সহজ সরল যে ভাবনা তা ঘা খেতে লাগলো প্রতি মূহুর্তে। সকলের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা পূরণ করতে করতে যাঁতাকলে পড়ে শস্য কণার মতো নিজেকে মনে হতে শুরু করলো।

বিয়ে করে সেই চাপ আরো বাড়ে। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে বৈশালীও তার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এর মাঝে আর একটি সমস্যা এসে হাজির হল। তার  বোন-দিদিরা এক কাঠা মতো করে জমি পাবে সেটা তারা বিক্রি করবে। যদি অমল এখনই তা না কেনে তাহলে তারা তা অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দেবে। তাদের নাকি টাকার খুবই দরকার। তার বসত বাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। জমিটা না কিনলে তার সেখানে বাড়িই হবে না।

 সেই জমির ব্যাপার নিয়ে সন্ধ্যার দিকে বাবা-মা দুই বোন-দিদি বাড়ির উঠোনে বসে কথা বলছে। বৈশালী একটু দূরে দলছুট হয়ে মাটির দাওয়াতে বসে আছে, আর সকলের কথা শুনছে।  তার দিদিদের দাবি তাদের পাঁচ লাখ করে দিতে হবে। অমল আকাশ থেকে পড়ে। যেখানে জমির দাম কম বেশি তিন লাখ করে, সেখানে পাঁচ লাখ করে চাই কি করে!

প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে অমল বলে, 'আমি জমি নেব না। এ দাম আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।'

'কেন! এমন কী দাম বেশি চেয়েছে দিদি!', ছোট বোন বলে...

'তাছাড়া বোন-দিদিদের কিছু বেশি দিলে তুই নিঃস্ব হয়ে যাবি না।' - যুক্তি সাজায় দিদি।

 বৈশালী আর সহ্য করতে পারে না। জোরে জোরে বলে 'নিজেদের বেলায় ষোলো আনা। সারাজীবন যে ভাইয়ের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধে নিলে, সেই ভাইকে তো এ টুকু জমি ছাড়তেও পারছো না।'

'তুই আমাদের মধ্যে কথা বলছিস কেন!' ঝাঁজিয়ে ওঠে দিদি।

বৈশালী প্রতিবাদ করতে গেলে মা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ‘বউ’ মা, তুমি চুপ করো, আর কথা বাড়িও না। বোনদের যখন ভায়ের একটা দাবি করছে তখন যাইহোক একটা কমবেশি দিয়ে সন্তুষ্ট করতে হবে তো...'

'যাইহোক আপনার আদরের মেয়েরা মানলে তো!' গজগজ করতে করতে ঘরের ভেতর চলে যায় সে।

'দেখেছো মা, দেখেছো বাবা। তোমার ছেলেকে যেন গাছ পড়া খাইয়েছে। তার বউ কত কথা আমাদের শোনাল, তারপরেও কেমন  চুপ করে আছে!'

'ছাড় না, যেটা নিয়ে কথা হচ্ছে সেটা নিয়ে বল।'

মেয়েকে শান্ত করার চেষ্টা করে বাবা।

অমলের বাবার কথা যেন কানে যায় না দিদির কথার সুত্র ধরে বলে, 'তোরাও গাছ খাওয়া,  কে নিষেধ করেছে। যখন খুশি যে কোনো গাছের ছাল পাতা শেকড় নিয়ে আসিস, আমি সব খেয়ে নেবো।'

অমলের বাবা রাগ দেখিয়ে বলে, 'তোদের শান্ত করা ভগবানেরও সাধ্য নাই। ঝামেলা থামা আমি যে দাম বলছি সেটাই ফাইনাল। আমাদের এ গুলোতে এখন জমির দাম তিন লাখ টাকা মতো। ও দামেই তোরা ওকে জমিটা দিয়ে দে।'

কিন্তু এখানেই বোন-দিদি ক্ষান্ত হয় নি, তাদের এ ভাবে বাবা ঠকাতে পারে না। এই সব নানা কথা বলতে থাকে। শেষে তার মা আরো পঁচিশ হাজার করে দিতে বলে। অমল আর কথা না বাড়িয়ে তাতেই রাজি হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে এ ঝামেলা মিটলে কিছুটা শান্তি যদি পাই সে।

ঘরে এসে অমল বিছানায় শুয়ে পড়ে। বৈশালী ঘর থেকে সব শুনেছিল এতক্ষণ। অমল ঘরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সে মুখ কালো করে  বেরিয়ে যায় ঘরে থেকে। অমল কিছু না বলে শুয়ে শুয়ে টাকা জোগাড়ের কথা ভাবতে থাকে।  সে মনে মনে হিসেব কষে।

'তার কাছে দু লাখ টাকা মতো আছে। বৈশালী যদি তার কিছু গয়না বন্ধক দেয় তাহলে আরো লাখ খানেক টাকা হবে। কিছু টাকা এদিক ওদিক ধার পড়ে আছে সেটা সংগ্রহ করতে হবে। আর যদি কিছু লাগে তখন দেখা যাবে। আপাতত সুমনকে ফোন করা যাক।'

সুমন তার বাল্যকালের বন্ধু। প্রায় এক বছর আগে আশি হাজার টাকা সে ধার নিয়েছিল। দুই মাসের মধ্যে তা শোধ করে দেবে বললেও এখনো সে টাকা শোধ করেনি। শুধু তাই নয় টাকা নেওয়ার পর আর ফোনও করেনি। অমলের এতদিন টাকার দরকার হয়নি বলে সেও আর ফোন করেনি।

পরপর দুবার ফোন করল কিন্তু কোনো রেসপন্স পেল না। দশ মিনিট অপেক্ষা করার পর আবার অমল ফোন করে। এবার সুমন ফোন ধরে।

ফোন রিসিভ করেই সুমন বলে, 'সরি বন্ধু, তোর টাকাটা দিতে পারিনি, আর কয়েক মাস আমাকে সময় দে। আমি তোর টাকা শোধ করে দেবো।'

অমল বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ ইচ্ছা করেই রাখেনি এতদিন। যে বন্ধু টাকা নেওয়ার পর যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তার উপর অভিমান হওয়াই স্বাভাবিক।  সে অন্যান্যদের কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছে যে সে মুদির দোকান দিয়েছে এবং তা খুব ভালোই চলছে। বন্ধুর উন্নতি হোক সে সেটা চায়। কিন্তু আজ যখন তাকে সে ফোন করে এবং ফোন রিসিভ করেই আবার সময় চাই তখন তার মেজাজটা বিগড়ে যায়।

অমল বলে, আমি কি তোকে টাইম দেওয়ার জন্য ফোন করেছি! টাইম নেওয়ার দরকার হলে তুই তো দশ মাস আগেই আমাকে ফোন করতে পারতিস! এবার বল তুই আমাকে কবে টাকা দিতে পারবি। এবং সেটা নির্দিষ্ট করে ডেড বল। তার একদিন পরে হলেও আমি কোনো কথা শুনবো না।'

সুমন সামনে মাসের একটা ডেট উল্লেখ করে। অমল 'ঠিক আছে' বলে  ফোন কেটে দেয়।

ঘন্টাখানেক পর বৈশালী ঘরে আসে। ঘরে এসেই রুদ্রমূর্তি নিয়ে বলে, দাতা কর্ণদের এইরকমই হয়। বন্ধুরা তো ঠকায়ই এমন কি মা-বাবা, ভাই-বোন সবাই ঠকায়।'

'এমনিতেই মনটা ভালো নেই, তার উপর বাজে বকে মাথাটা খারাপ করো না।'

'ঠিক আছে আমি কিছু বলবো না। তবে একটা কথা মনে রেখো, জমি বিক্রির পর ওরা যেন আর এই ডিহিতে পা না দেয়।

'সব সময় ঝামেলা না পাকালে কি হয় না!'

'ঝামেলার কি দেখেছো, ও ডাইনি রাক্ষসী গুলোর মুখ দেখলেও কেমন লাগে। আমার শেষ কথা, ওদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবে না আর।'

রাত আটার দিকে বীতশ্রদ্ধ হয়ে অমল বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সে আর নিতে পারছে না।  ভাবে এই জীবন আর সে রাখবে না। শান্তিহীন জীবনে এভাবে তিলেতিলে ক্ষয় হওয়ার থেকে একেবারে শেষ হয়ে যাওয়া অনেক ভালো। একটা অটোরিকশা ধরে খাগড়া ঘাট রেল স্টেশনে আসে। স্টেশনের খাড়া সিড়ির একটা ধাপ জীবনের একটা ধাপ মনে হয়। উপরে উঠে মনে হয় এই তো আর একটু অতিক্রম করলে প্লাটফর্মের নিচে রেল লাইন, জীবনের শেষ এখানেই।

'কী দাদা কোথায় যাচ্ছেন ?'

স্টেশনের উপর বাম পাশে সেড, তার নিচে একটা তক্ত পোশের উপর একজন বসে আছে। সামনে বিভিন্ন ঢব সাজানো। মশলা মুড়ির দোকান এটি।  অনিচ্ছা সত্ত্বেও উত্তর দিল, ট্রেন ধরবো।

এখান থেকে একটু দূরে যাবে বলে উল্টো দিকে ঘুরলো। পেছন থেকে আবার ডাক, দেরি আছে ভাই, এখানে এসে বসো একটু গল্প করি।

'দেরি আছে!' ঘুরে জিজ্ঞেস করে, 'কত দেরি?'

বসে থাকা ভদ্রলোক হাসি হাসি মুখে বলে, আপনি যত তাড়ায় আছেন তার থেকে অনেক দেরি।'

'মানে...'

'এখানে আসুন বলছি।'

দোকানের সামনে একটা ছোট্ট বেঞ্চ পাতা, তার পাশে এসে অমল দাঁড়ায়। দোকানদার ইশারা করে বসতে বলেন।

'আপনি উত্তরে যান বা দক্ষিণে যান, উপরে যান বা নিচে যান, আপনাকে অন্তত পক্ষে এক ঘন্টা অপেক্ষা করতেই হবে।'

'মানে...'

'মানে... লাইনে কাজ হচ্ছে। অনেক ট্রেন বাতিল আছে। এক ঘন্টার আগে কোনো ট্রেন নেই।'

'সে না হয় ঠিক আছে, কিন্তু কথার মাঝে এতো হেঁয়ালি কেন!'

'সরি দাদা, আপনাকে খুব আপসেট দেখাচ্ছে তাই একটু হেঁয়ালি করলাম। যদি আপনার মন ভালো হয়।'

'না না আপসেট কেন লাগবে, আর আর আমার মনও ঠিক আছে।' একটু মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলে, 'এক বোতল জল দিন তো।'

'দাদা কষ্ট করে নিয়ে নিতে হবে। ঐ যে ওখানে আছে' একটু দূরে রাখা জলের বোতল গুলো দেখিয়ে দিয়ে দোকানদার বলে।

অমল উঠে গিয়ে এক বোতল জল নেয়। জামার পকেট থেকে একটি একশো টাকার নোট বের করে দিতে গিয়ে অমল চমকে ওঠে। জলের বোতলটা নিয়ে নিতে বলার হেতুটা বুঝতে পারে অমল। দোকানদারের দুই পা নেই। হাটুর উপর থেকে কাটা। টাকা দিতে দিতে অমল জানতে চাই তার এই অবস্থার কথা।

দোকানদার তার কথায় বিচলিত হয় না। এমন প্রশ্ন অনেকের কাছেই শুনতে হয় তাকে। এমন কি তার এই অবস্থার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে সাভাবিক ভাবেই সব বলে গেল। যেন এমন মর্মান্তিক ঘটনা শুধুই একটা ঘটনা। এর প্রভাব তার জীবনে কিছুই পড়ে নি।

দোকানদারের করুণ কাহিনী শুনতে শুনতে অমল নিজের জীবন নিয়েও অনেক সন্তুষ্ট হল। তার নিজের জীবনের চেয়েও অনেক মানুষের জীবন আরো যে দুর্বিষহ তা উপলব্ধি করে নিজের মনটাকে অনেক হালকা মনে হল। হঠাৎ করেই নিজের জীবন সম্পর্কে একটা ভালোবাসা জন্মালো তার। উঠে দাঁড়ালো, দোকানদার কে বলল, 'আসি ভাই বাড়ি ফিরতে হবে। দেরি হলে আর কোন গাড়ি পাওয়া যাবে না।'

দোকানদার হেসে বলল, 'তাহলে আপনার ট্রেন ধরার ইচ্ছেকে বিসর্জন দিলেন? যাক আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। লড়াই করুন, হার মানবেন না কখনো।'

'ধন্যবাদ ভাই।' অমল দোকানদারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অটো ধরার জন্য দ্রুত স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেল।

 

 

 

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::