ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

গল্প

দিবাকর

বাবার ছোট ছেলে দিবাকর। দাদাদের আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। দিবাকরের খামখেয়ালীপনার জন্য বাবা-মা তার মাসির মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেয় । বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়ি হওয়ায় যতদিন গরু পারাপার ছিল তত দিন তাদের কোন সমস্যা ছিল না। বর্ডার সিল হয়ে যাওয়ার কারণে গরু পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় আর্থিক অনটন। বাবা-মা ভাবে ছেলেকে পৃথক না করলে কাজ করে খাবে না। পৃথক করে দেয়।

ছোটবেলা থেকে আদরের ছেলে দিবাকরের কাজ করার অভ্যাস ছিল না। দিবাকর কী করবে ভেবে পায় না। অস্থিরতায় ভুগতে থাকে। শুরু হয় মদ, গাজা খাওয়া। সংসারে আরোও অভাব-অনটন বাড়তে থাকে। সমানে বাড়তে থাকে স্ত্রীকে মারধর। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে কী খাচ্ছে কী করছে সব খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দেয়।

একদিন সন্ধ্যেবেলায় বন্ধুদের বৈঠকে একজন বলে, গোয়া থেকে কাজ করে অসীমরা অনেক টাকা এনেছে।
দিবাকর  à¦¤à¦¾à¦¦à§‡à¦° সাথে যোগাযোগ করে। পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়ে তিন হাজার বাড়িতে দেয়, এক হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কাটে, আর এক হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে গোয়া পাড়ি দেয়। ওখানে মাস দুয়েক কাজ করে ধার শোধ করে।

এখন প্রতিদিন রাত্রে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে। স্ত্রীকে আর বকে না, গালিগালাজ করে না। ছেলেমেয়েরা কী করছে, কী খাচ্ছে, স্কুল যাচ্ছে কিনা সমস্ত খোঁজখবর নেয়। বাবা-মায়ের খোঁজখবর নেয়।
স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদেরকে অনেকদিন কোনো পোশাক কিনে দেয়নি। তার ইচ্ছে পোশাক কিনে দেওয়ার। তাই প্রতিদিন অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করে।

করোনা সংক্রমণের কারণে হঠাৎ করে সরকার লকডাউন ঘোষণা করে। কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দু-তিন দিন যেতে না যেতেই এলাকাবাসী শ্রমিকদের বাড়ির মালিককে চাপ। শ্রমিকরা যেন বাড়ি চলে যায়।
রাত্রিবেলায় শ্রমিকরা ব্যাগপত্র নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। কারণ সকাল বেলায় হাঁটলে পুলিশ দেখে নেবে আর বেধড়ক মারবে। দিনের বেলায় জমিতে, গাছের নিচে বা নদীর পাড়ে শুয়ে থাকে আর রাতের বেলায় রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে।

ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত ক্লান্ত শরীরে গাছে হেলান দিয়ে দিবাকর স্ত্রীকে ফোন করে বাড়ির খবর নেয়। স্ত্রী বলে আমি এই দিক ঠিক দেখে নেবো। তুমি ভালই ভালো বাড়ি ফিরে এসো।

শ্রমিকরা জানতে পারে গোয়া থেকে উড়িষ্যা পর্যন্ত এরোপ্লেন চলবে। পশ্চিমবঙ্গে প্লেন ওঠানামা করছে না। সবাই বাড়িতে ফোন করে টাকা পাঠানোর কথা বলে। কিন্তু দিবাকরের তো টাকা নেই। সে কীভাবে প্লেনের টিকিট কাটবে! সঙ্গে থাকা বন্ধু মিলন তার টিকিট কাটার টাকার ব্যবস্থা করে। প্লেনে করে উড়িষ্যা পৌঁছয় । শুরু হয় আবার রাত্রিতে হাঁটা। যেমনটি সীমান্তে সৈনিকরা সারিবদ্ধ ভাবে নীরবে টহল দেয়।

ক্ষুধা-তৃষ্ণায় প্রত্যেকে দুর্বল হয়ে পড়ে। একদিন পুলিশ তাদের তাড়া করে। সকলে পালিয়ে যায়। কিন্তু দিবাকর দুর্বল শীর্ণ হওয়ায় ধরা পড়ে যায়। বেধড়ক মার খায়। মারের আঘাতে পায়ের একটি হাড় ভেঙে যায়। আর হাঁটতে পারে না। পড়ে পড়ে শুধু কান্না করে। উড়িষ্যা পুলিশ তাকে হাজার পাঁচেক টাকা দেয় এবং তাদের সকলের জন্য বাড়ি যাওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা করে দেয়।

প্রথম দিন বাবা-মা ও মেজো ভাই ফল নিয়ে অসুস্থ ছেলেকে দেখতে আসে। পায়ের একটা বড় অপারেশন করতে হবে। অর্থের অভাবে অপারেশন করতে না পারায় দিবাকর চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে পড়ে।

 

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::