ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

গল্প

পেটি

মাস্টার, কিরণ, রাজু একটি ডাইনিং এর মেঝেতে বসে গল্প করছে । মাস্টারের বেশ ভুঁড়ি থাকার কারণে ভালোভাবে বসতে না পেরে প্রাচীরে ঠেস দিয়ে পা দুটি রাজুর দিকে ছড়িয়ে দিয়ে বসে মোবাইলে সিনেমা দেখছে। রাজু নামায পড়ার মতো করে বসে বটি দিয়ে মরিচ, পেঁয়াজ কাটছে আর কিরণ ডাইনিং এর পাশে সিঁড়ির ধাপিতে বসে মোবাইলে লুডু গেম খেলছে। ডাক্তারের বউ জুলি রান্নাঘরে সকলকে খাবার পরিবেশনের জন্য ব্যস্ত আছে। কিছুক্ষণ পর জুলি কয়েকটি আলু সিদ্ধ রাজুকে দিল পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে আলুভর্তা করার জন্য। জুলি রান্না করে ওভেন ধরিয়ে প্রেশার কুকার চাপিয়ে দিয়ে ভাতের হাড়ি, থালা, জলের বোতল একে একে ডাইনিং এর মেঝেতে রাখে। সবশেষে প্রেসার কুকারটি নিয়ে এসে মাস্টারকে বলে - তুমি পা দুটি সরাও না সবাই খেতে বসবে তো। রাজু তোমার আলুভর্তা হলো? কিরণদা নিচে এসো,খেতে বসবে।

কিরণ - কী সবজি করেছ?

জুলি- মাংস আলুতে কষা।

কিরণ - প্রতিদিন মাংস! তোমরা সবজি ডাল করো না?

জুলি - তোমার দাদা মাংস না হলে ভাত খায় না। সবজি পাতেই নেবে না।

কিরণ - আপনি একজন মাস্টার মানুষ। ভালোভাবেই জানেন সবজির গুনাগুন। আর আপনি মাংস ছাড়া ভাত খান না। ( মাস্টারের দিকে তাকিয়ে)

জুলি শোনো কালকে আমার জন্য অল্প ডাল আর সবজি রান্না করবে তো।( জুলির দিকে তাকিয়ে)

খাওয়া শেষে মাস্টার আর কিরণ দ্বিতলার ঘরে চলে যায়। মাস্টার বিছানায় শুয়ে যায়।

মাস্টার - এস কিরণ শুয়ে যাও।

কিরণ - না। খাওয়ার পর পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট না শুয়ায় ভালো। বরং চলাফেরা করলে খাবার ভালোভাবে পাচিত হয়। আর এজন্যই আপনার ভুঁড়ি বেড়েই যাচ্ছে।

মাস্টারদা একটা কথা বলি এই করোনার সময় আপনি সতর্ক ভাবে চলেন। মুখে মাস্ক আর ঘনঘন স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। কলকাতায় করোনার সংক্রমণ বেশ ছড়াচ্ছে। আর আপনাদের বাড়িতে যে এত মানুষের আনাগোনা তাতে সংক্রামিত হওয়ার অনেক সম্ভাবনা আছে। কে কোথা থেকে আসছে তার ঠিক ঠিকানা নেই। মানুষের আসা-যাওয়া টা বন্ধ করার চেষ্টা করেন।

মাস্টার - ধুর! আমাদের করোনা হবে না।

কিরণ - কেন হবে না?

মাস্টার- মুসলিমদের কোথাও করোনা হচ্ছে শুনতে পাচ্ছ?

কিরণ - রোগ কোনো জাত দেখেনা। তাহলে সৌদি আরব, ইরান, ইরাক মুসলিম দেশ। সেখানে কেন করোনা মহামারী দেখা দিচ্ছে ?

(এই কথা শুনে মাস্টার বিছানা থেকে উঠে যায়। বিছানার তলা থেকে একটি জলের বোতল নিয়ে জল খায়। তারপর ঘরের বাইরে থেকে হেঁটে এসে আবার শুয়ে মোবাইল টিপতে থাকে।)

মাস্টার- আরব আর আরব আছে নাকি? সেখানে সিনেমাহল তৈরি হচ্ছে।

কিরণ - আপনি সিনেমাহলের কথা বলছেন, আপনার দৃষ্টিতে সিনেমা দেখা খারাপ। তাহলে আপনি কেন সিনেমা দেখেন? আর সৌদি আরব যে ইসলাম অনুযায়ী চলছে না তাহলে লক্ষ লক্ষ মানুষ কেন সেখানে হজ করতে যায়?

(মাস্টার উঠে বসে যেভাবে সদ্য বসতে শেখার শিশুরা পা ছড়িয়ে বসে, ভুড়ি চুলকায়, লুঙ্গিটা ভালো করে বাঁধে, হালকা শীতের দিন ঘরে ফ্যান চলছিল তা সত্ত্বেও গরম লাগছে বলে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে জানালাটা খুলে দেয়।)

মাস্টার - তুমি নাস্তিকের মত কথা বলছো।

( কিরণ রেগে যায়, পায়চারি বন্ধ করে খাটে ঠেস দিয়ে দাড়ায়)

কিরণ - তাহলে আপনি বলেন হজের কোটি কোটি টাকা কিভাবে সমাজের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে?

উত্তর না দিয়েই বাথরুম যেতে হবে বলে মাস্টার নিচে চলে যায়।

মিনিট পাঁচেক পর জুলি কাশতে কাশতে ঘরে ঢুকে।

কিরণ - তোমার(জুলি) বেশ সর্দি কাশি হয়েছে দেখছি। সর্দি-কাশি কবে থেকে?

জুলি - চোদ্দো পনেরো দিন থেকে হচ্ছে।

কিরণ - ওষুধ খাচ্ছো না?

জুলি- মাস্টারকে বারবার বলছি কিন্তু শুনেই না। আজ যেন বেশি মাথাটা ভারী ভারী করছে।

ওঠো দেখি বিছানা ঠিক করে দিই।

(জুলি বিছানা ঠিক করে দিয়ে জামা-কাপড় ভাঁজ করে আলমারিতে রাখতে থাকে।)

মাস্টার বাথরুম থেকে এসে ঘরের বাইরের বারান্দায় পায়চারী করছে।

কিরণ - ডাক্তারদা ভেতরে আসুন। জুলির বেশ সর্দি কাশি হচ্ছে। গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপারটা দেখুন। এগুলো আবার করোনার লক্ষণ। বেশি কিছু হয়ে গেলে হাসপাতাল হাসপাতাল দৌড়ে বেড়াতে হবে। এখন হাসপাতালে পেসেন্ট ভর্তি নিচ্ছে না। তখন বিশাল সমস্যা দেখা দিবে।

মাস্টার - রোগ কি করে ভালো হবে। নিয়ম করে তো ওষুধ খায় না। জিজ্ঞেস করো এখনো কতটা ওষুধ বাকি আছে।

জুলি- ওষুধ দুদিন আগেই শেষ হয়ে গেছে।

( কিরণ আলাদা ঘরে ঘুমাতে চলে যায়।)

দিন কয়েক পর একটি দোকানে মাস্টার আর মাস্টারের বন্ধু গল্প করছেন। কিরণ তাদের গল্প শুনছে।

বন্ধু- যতীন ডাক্তার চিকিৎসা বাবদ মারা গেলেন। এত রোগী দেখতেন যে তিনি সবসময় চাপ এর মধ্যেই থাকতেন। তিনি টাকা ছাড়া কিছু চিনতেন না । আর অনেক মহিলার সাথে তার সম্পর্ক ছিল।

(যতীন ডাক্তারের চেম্বারে মাস্টারের বন্ধু কাজ করে)

মাস্টার - বেশ কয়েক দিন থেকে তার জ্বর সর্দি কাশি হচ্ছে। তিনি নিজেই সেগুলোর কি ট্রিটমেন্ট করতেন না?

বন্ধু - রাত্রি দশটার সময় তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তার পরিচিত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যায়। কিন্তু তারা করোনা ভয়ে এডমিশন নেয় নি। আটটা বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে শেষে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই তিনি মারা যান।

(কিছুক্ষণ গল্প করেই মাস্টারের বন্ধু চলে যান।)

দিন দুয়েক পরে সন্ধ্যেবেলায় হঠাৎ পাশের ঘরে কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। কিরণ দ্রুত সে ঘরে যায়। জুলি খাটের উপর হেলান দিয়ে বুকে হাত ঘষছে আর কান্না করছে আর মাথা এদিক ওদিক করছে।

কিরণ- কী হয়েছে ? জুলি ওরকম করছে কেন?

মাস্টার লুঙ্গি পরে খালি গায়ে জুলির পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে। কোনো কথা বলছে না। ফ্যালফ্যাল করে একবার কিরণের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার জুলির দিকে তাকাচ্ছে।

জুলি বুকের ব্যথা আর শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা আরও বেড়ে চলেছে।

কিরণ - মাস্টার ওঠেন জামা প্যান্ট পরে নিন । শীঘ্রই ডাক্তার-খানা নিয়ে যেতে হবে। একটি এম্বুলেন্স বা গাড়ির ব্যবস্থা করুন।

মাস্টার দুই একজনকে ফোন করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদেরকে ফোনে পাই না। মাস্টার অস্থির হয়ে পড়ে। কিরণ এদিক ওদিক করে। বুঝতেই পারছে না মাস্টার কেন একটি গাড়ির ব্যবস্থা করছে না। একটি নেবুলাইজার মেশিন তার মুখে লাগিয়েছে । কিন্তু তাতে সমস্যা কমছে না। পাশের বাড়ির মানুষ জন এসে হাজির। তারাও হা করে তাকে দেখছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। মাস্টার এসে কিরণকে বলে - কোথায় নিয়ে যাব? কেউতো এডমিশন নেবে না? ঘুরে ঘুরেই হয়তো মারা যাবে।

প্রায় ঘন্টা খানেক পর জুলি কিছুটা সুস্থ হয়। পাশের বাড়ির মানুষ সব আস্তে আস্তে চলে যায়

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::