ষষ্ঠ বর্ষ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি - মার্চ ২০২৪

সম্পাদকীয়

কৃষক বনাম কর্পোরেট

রক্ষকবলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বারে বারে একটি কথা ওঠে আসে। তার সমাধান হয়না। হবার কথাও নয়। কথাটি কী? কথাটি হল এই ব্যবস্থায় রাজনীতি ক্রীড়নক। নেপথ্যের বাজিকর সেই রক্ষ। তার বৈষয়িক যাবতীয় স্বাছন্দ্যের ব্যবস্থাপক হল রাজনৈতিক নেতৃত্ব। স্বাধীনোত্তর ভারতে এই প্রতিপাদ্যটি বারেবারে উচ্চারিত হলেও রাজনীতির আঙিনায় থাকা ব্যক্তিদের মানে নেতাদের বা পার্টিগুলির ভূমিকার সাথে এই নেপথ্যের সম্পর্কটি পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠেনি। না ওঠার কারণ মিশ্র অর্থনীতি। রক্ষ এই অর্থনীতি প্রণয়ন করে নিজের গোপন চেহারাটি সামনে আনতে দেয়নি। রক্ষচালিত মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রণয়নের পরেও গণ-জনতার কাছে তার রূপটি পরিছন্ন হতে না দেওয়ার জন্য কতই না ‘ডোল’ উপঢৌকন তাকে একে একে দিতে হয়েছে। যার সর্বশেষ প্রয়াস মনমোহন জমানায় নারেগা প্রকল্প সহ আরো এক গণ্ডা প্রকল্প। যার মোদ্দা কথা হল রক্ষ মুক্তবাজারকে তার চরমে নিতে গিয়েও নিতে পারেনি। জনকল্যাণের দায় নামক কথাটির আড়ালে সে আশ্রয় নিয়েছিল। ২০১৪ পরবর্তী সময়ে রক্ষের এই চেহারাটি অপসৃত হয়েছে। যদিও সে অতি ছলে ‘লারজার দ্যান লাইফ’ নেতার সর্বভারতীয় বা ইমেজ রূপে একজনকে খাড়া করেছে। তা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হয়নি।

হয়নি তার প্রমাণ সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনে সরাসরি কৃষকরা আদানী বা আম্বানী কর্পোরেট গ্রুপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। কেবল বিক্ষোভ নয় ডাটা ট্রান্সপারেন্সি না হোক ডাটার ছড়াছড়ি যুগে রক্ষ তার তাবেদার রাষ্ট্রীয় রাজনীতির কাছে সেই ডাটা রক্ষা করতে পারছে না। তার দোসর সোস্যাল মিডিয়াও counter productive  হয়ে তার exposure এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কৃষকরা পাঞ্জাব ও হরিয়ানার জিও টাওয়ার বন্ধ করে দিচ্ছে। এদের সিম বয়কটের আহ্বান জানাচ্ছে। পুঁজি গোষ্টীগুলি সমস্যায় পড়ছে। তাদেরকে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি জারি করে বলতে হচ্ছে কৃষি আইনে তাদের কোনো হিস্যা নেই।

নয়া কৃষি আইনে দৃশ্যতই বাজার নিয়ন্ত্রণের যে ছিঁটেফোটা এতদিন বজায় ছিল তা তুলে দেবার ফন্দি করা হয়েছে।

কর্পোরেটদের হাতে কৃষক চুক্তি চাষিতে পরিণত হোক। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আইন রদ করে মজুতদারিকে বৈধতা দেয়া- ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে সেই রাজনীতি যে কর্পোরেটের স্বার্থ রক্ষার্থে নিবেদিত প্রাণ তা প্রমাণ করছে। রাষ্ট্র তার সর্ব শক্তি দিয়ে এই স্বার্থ রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। লারজার দ্যান লাইফ বা হৃদয় সম্রাট মঞ্চে মঞ্চে বক্তৃতা দিলেও কৃষককে বোঝানো যাচ্ছেনা। অর্থাৎ লড়াইটা রাজনৈতিক গ্রুপ বনাম কৃষক নয়। লড়াইটা কৃষক বনাম কর্পোরেট থেকে অন্য দিকে ঘোরানো যাচ্ছে না।

গত ছয় সাত বছরে যে যে পলিসিগুলি রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়েছে আখেরে তা যে কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষার্থে তা জনতার কাছে আর অধরা নেই। নোটবাতিল, জিএসটি, লকডাউন ইত্যাদির মধ্যে দিয়েও দেখা যাচ্ছে এই গ্রুপগুলি কয়েকশো গুণ মুনাফা করছে।

শত্রু আড়ালে গেলে তার বিরুদ্ধে লড়া যায়না। শত্রু প্রকাশ্যে। লড়াই তাই সহজ। আগামী দিনের নতুন ভারতবর্ষ সেই লড়াই গড়ে উঠবে কিনা তা নির্ভর করছে এই শত্রুর বিরুদ্ধে জনতাকে জ্ঞান-বিশ্বাস-সংগ্রামের হাতিয়ারে শাণিত করা যায় কিনা- তার উপর।

 

:: ভয়েস মার্ক ::

- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -

সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন

গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১

পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক

নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার

সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ

RNI Ref. Number: 1343240

-: যোগাযোগ :-

সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮

azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com

:: সামাজিক মাধ্যম ::