আমরা যারা গত শতকের আশির দশকের গোড়ায় জন্মেছি তারা এমন একটা বন্ধ্যা সময় প্রত্যক্ষ করেছি যেটা আমাদের আগের প্রজন্মের লোকেরা করেন নি। সময়টা বন্ধ্যা এই জন্য যে, এই সময়ে সোভিয়েত ব্যবস্থাপনা ভাঙনের মুখে, কমিউনিজমের বিপরীতে মাথা তুলেছে পোস্ট মডার্নিজম। যা আসলে জড়বস্তুবাদ। কমিউনিজম দিয়ে সেই জড়বাদকে ঠেকানো যাচ্ছে না। একটা দর্শন শূন্য দুনিয়ার দিকে পৃথিবী এগিয়ে চলেছে। এই সময়টাতে আমাদের বেড়ে ওঠা। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ থেকেই কিছুদিনের মধ্যেই গোচরে এসে যায়, না, মানব জাতির ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান হবার কোনো কারণ ঘটেনি। যতই হান্টিনটংরা ইতিহাসের মৃত্যু ঘোষণা করুক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে সভ্যতার সংকটের মুখে দাড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ যে উপলব্ধির কথা গভীর প্রত্যয়ের সাথে ব্যক্ত করেছিলেন, তারই বাস্তবায়নে আমরা সত্তর দশকের মাঝামাঝি পেয়ে গেলাম ‘অস্তিত্ব’ দর্শন তত্ত্ব। যা আসলে এযাবৎ মানব জাতির অর্জিত জ্ঞান দর্শনকে রক্ষণকামী অপশক্তির কবল থেকে আর্থসমাজে প্রয়োগ করার প্রযুক্তির সূত্র দেয়। সেই সূত্রকে কাজে লাগালে আর্থসমাজের অন্ধকার কেটে যেতে পারে। আলোকিত হয়ে উঠতে পারে এ বিশ্ব চরাচর।
২০১২ সালে এই ‘অস্তিত্ব’ জীবনদর্শনের প্রেরণায় পিরতলায় (ফতেপুর, লালগোলা) একটি কালচারাল গ্রুপ তৈরি করা হয়। ঐ বছরেই সেপ্টেম্বর মাসে ‘ছাড়পত্র’ নামে ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। পরের বছর (২০১৩) আরও একটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। পিরতলায় ‘ছাড়পত্র’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে ‘অস্তিত্ব’ নিরিখে সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র (কালচারাল স্টাডি সেন্টার) গড়ে তোলা হয়। ইতিমধ্যে অস্তিত্ব দর্শন অনুসারী সাংস্কৃতিক ট্রাস্ট ‘সোসিও প্ল্যান কালচার এ্যাক্টিভেশন’ (এসপিসিএ) ২০১৩ সালে রেজিস্ট্রিকৃত হয়। এর আগেই এসপিসিএ এর রেজুলেশন অনুযায়ী বর্তমান সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে ও সম্পূর্ণ আর্থিক সংঙ্কুলানে চলতে শুরু করে। ...
আমার নিজের কাছে খুব লজ্জা পেতে লাগলো। ভেবেছিলাম বন্ধু মহলে প্রশংসনীয় নারী উন্নয়ন আর অধিকার নিয়ে আমার লেখাটি বিশেষ ভাবে পড়তে বলব।কিন্তু এ কেমন সমাজ! যে সমাজ নারী অধিকারের অছিলায়, নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে একটা নিরীহ লোককে দাপুটে মেয়ের সাথে পুনরায় বিয়ের ফাঁদে ফেলে তার জীবনকে নিয়ে ছিনমিনি খেলছে। পঞ্চান্ন বছরের মানুষটা দুর্ঘটনার ভারে একপ্রকার বুড়ো হয়ে গেছে। পড়ুন গল্প জাঁতাকল । লিখেছেন সুকৃতি।
সোসিও প্ল্যান কালচার অরগানাইজেশনের (SPCO) উদ্যোগে গত ১৪/১১/২০২৩ তারিখ ভগবানগোলার ব্যবসায়িক সমিতির হলঘরে অনুষ্ঠিত হল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সেমিনার। অনুষ্ঠানে প্রায় শতাধিক শ্রোতা-দর্শক উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালক মহাশয়া দুপুর ২.০০ টায় অনুষ্ঠানের সূচনা করেন প্রারম্ভিক বক্তব্যের মাধ্যমে। সূচনায় ব্যক্তি সত্তার জন্মগত নেগেশনের কবলে থাকার কথা কাব্যিক ব্যঞ্জনায় তুলে ধরেন। ব্যক্তি সত্তার এই নেগেশন সমাজ সত্তায় জগদ্দল পাথর হয়ে যায় ক্রমশ। যা জীবন তথা সমাজ মানবতা বিকাশের অন্তরায়। ব্যক্তিসত্তা ও সমাজ সত্তার নেগেশন নিয়ন্ত্রণ করে জীবনের সুর-তাল-ছন্দের সন্ধানে আমিত্ব চেতনিক হয়ে আমিত্ব কর্ষণেই অনূভূতির তীব্রতা-তীক্ষ্ণতা, সূক্ষ্মতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উদবোধনী সংগীতের পর এসপিসিও-র সম্পাদক সংগঠনের পরিচিতি, কার্যাবলীর বিবরণ দেন। উপস্থিত শ্রোতা দর্শকদের সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার আবেদন জানান। শ্রুতি নাটক, আবৃত্তি, সংগীত, হারমোনিকা ইত্যাদি পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক প্রযোজনা সুরেলা হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে দিনের মূল কর্মসূচি ছিল- সেমিনার। বিষয়- পরিকল্পিত জীবন তথা আর্থসমাজ গঠনের অন্তরায়। বক্তা ছিলেন দুই জন। প্রথম বক্তা মোঃ আযাদ হোসেন, ভয়েস মার্ক পত্রিকার সম্পাদক। দ্বিতীয় বক্তা সামশুল আলম, সমাজ-সাংস্কৃতিক কর্মী। বিষয়টির উপর প্রথমে আলোকপাত করেন মোঃ আযাদ হোসেন। পরবর্তীতে বক্তব্য রাখেন সামশুল আলম। বক্তা দুজনের আলোচনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি পরিস্কারভাবে উঠে আসে। বর্তমান আর্থসামাজিক জীবন পরিকল্পিত নয় তার অন্যতম তিনটি নজির যথাক্রমে ক) সর্বোচ্চ একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন করেও বেকারত্ব রয়েছে, খ) যৌন বৃত্তি এবং গ) ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিক্ষাবৃত্তি। এই তিনটির উপস্থিতিই বুঝিয়ে দেয় যে, বিদ্যমান আর্থসমাজ অপরিকল্পিত,অনিয়ন্ত্রিত। পরিণামে আর্থসমাজটি নানান বিকৃতি ও শোষণ-শাসন জর্জরিত।
শ্রমের বাহনেই জীবনের গতি। শ্রম ও শ্রমে উৎপাদিত মূল্য ব্যবস্থাপনার মধ্যেই নিহিত আর্থসমাজের চরিত্র। শ্রমিক সৃষ্ট শ্রমমূল্যের দুটি অংশ একটি আবশ্যিক ও অন্যটি উদবৃত্ত। আবশ্যিকে শ্রমিকের জীবন নির্বাহ আর উদবৃত্তে আর্থসমাজের বিকাশ নির্বাহ হয়। মূল্যের এই বিভাজন বাস্তবায়ন তখনই করা সম্ভব যখন অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত ও পরিকল্পিত। অর্থনিতির এই বস্তুমুখীন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব প্রায়োগিক রাজনীতির কৃৎকলায়। সেই রাজনীতির চরিত্র তখন তত্তাবধানী। তা মুক্তবাজার অর্থনীতি তথা উদবৃত্ত মূল্য ব্যক্তি মালিকানায় জড় করবার অর্থনীতিকে প্রতিহত করে। উদবৃত্ত মূল্য বিহিত এই রাজনৈতিক অর্থনীতি এমনি এমনি আর্থসমাজে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। তার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী আর্থসামাজিক প্ল্যান কালচার কর্মসূচি। যে কালচার দানবতার পায়ে লাগাম পরিয়ে মানবতা বিকাশের পথটি সুগম করবে। এই সূত্রে বস্তুগত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের চর্চা অত্যন্ত জরুরী।
অনিয়ন্ত্রিত তথা অপরিকল্পিত আর্থসমাজে আবশ্যিকসহ উদবৃত্ত মূল্যও দখল করে নেয় একটা শ্রেণি। সমাজের বেশিরভাগ মানুষ পড়ে যায় দারিদ্র্যের অন্ধকারে! যেমন আজকের দিনে গুটি কয়েক কর্পোরেট ফ্যামিলির হাতে ভারতের সিংহভাগ সম্পদ কুক্ষিগত। ব্যাপক জনতা দারিদ্র্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত। বেকারত্ত্ব আকাশ ছুঁয়েছে।
ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে সম্পর্ক আদতে শ্রম সম্পর্ক। এই শ্রম সম্পর্কের মধ্যে থেকে তাকে শ্রমে অংশ নিতে হয়, আবশ্যিক মূল্য বুঝে নিয়ে উদবৃত্ত মূল্য আর্থসমাজকে বুঝিয়ে দিতে হয়। এই উদবৃত্ত মূল্য ব্যবস্থাপনাতেই প্রয়োজন হয় প্ল্যান্ড ইকোনমি অর্থাৎ পরিকল্পিত অর্থনীতি। প্রয়োজন হয় ব্যক্তির চরিত্র গঠন। চরিত্র গঠনে তাকে আসতে হয় জ্ঞান-বিশ্বাস-সংগ্রামের প্রযুক্তিতেই। সাংস্কৃতিক কর্মসূচির দীর্ঘ ধারাবাহিকতাতেই গড়ে তুলতে হয় রাজনৈতিক দল। যার মাধ্যমে কর্পোরেট শক্তির হাত থেকে উদবৃত্ত মূল্যের দখল শ্রম তত্ত্বাবধায়ক শক্তির হাতে নিতে হয়। যার ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত ১৯১৭ সালের মহান রুশ বিপ্লব।
প্রশ্নোত্তর পর্বে—
১) সোভিয়েত উত্তর সময়ে মার্ক্স ইজম প্রয়োগ করা যাচ্ছেনা কেন? তাহলে কি লেনিনিয় লেভেলের নেতার অভাব? ২) আর্থসামাজিক পরিকল্পনা কীভাবে সম্ভব? ৩) পুঁজি অর্থনীতিতে উৎপাদিত উদবৃত্ত মূল্যের অধিকার কার? ৪) ধর্ম কী? আর্থসামাজিক পরিকল্পনায় তার ভূমিকা নেগেটিভ না পজিটিভ? ৫) কোনও ইজম তথা মতাদর্শ একবার বাস্তবায়িত হলে পরবর্তিতে কি তা সেই রূপে আবার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে? ৬) বিশ্বায়নী বাজার অর্থনীতির রাজত্বে ব্যক্তি মানুষের নিজেকে গঠন করবার কোনো স্বাধীনতা আছে কি? এবং ৭) পুঁজি অর্থনীতির বর্তমান সিচুয়েশনে ব্যক্তি তার প্রাপ্য মূল্যের উদবৃত্ত কীভাবে সোস্যালাইজ করবে? ইত্যাদি প্রশ্নগুলোর বস্তুগত উত্তর বক্তারা দেবার চেষ্টা করেন। প্রশ্নোত্তর পর্বটি শ্রোতা দর্শকদের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
সোসিও প্ল্যান কালচার অরগানাইজেশনের (SPCO) সভাপতি শ্রী মাজরুল ইসলামের সমাপ্তি ভাষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নাসিরা খাতুন।
- দ্বি-মাসিক পত্রিকা -
সম্পাদক: মোঃ আযাদ হোসেন
গ্রাহক পরিষেবা: রনিক পারভেজ, ৯৩৭৮৪৮০১৯১
পাণ্ডুলিপি (ম্যানুস্ক্রিপ্ট) প্রস্তুতি ও সম্পাদনা : মোঃ মিনারুল হক
নামলিপি ও প্রচ্ছদ চিত্র: হিমাদ্রী শেখর মজুমদার
সত্বাধিকার: ভয়েস মার্ক কালচারাল গ্রূপ
RNI Ref. Number: 1343240
সম্পাদকীয় দপ্তর:
ভগবানপুর , আষাঢ়িয়াদহ
লালগোলা, মুর্শিদাবাদ
পিন - ৭৪২১৪৮
azadm.1981@gmail.com, voicemark19@gmail.com